মাদক নিয়ন্ত্রণে ফিলিপাইনের মতো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আপনারা ফিলিপাইনে দেখেছেন, একসঙ্গে কী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরাও সেই জায়গায় যেতে পারি।’
আজ সোমবার রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধকল্পে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নসংক্রান্ত বিষয়ে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) দাবি, ২০১৬ সালে ৩০ জুন ক্ষমতা গ্রহণের পর ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে মাদক চোরাচালান ঠেকাতে মাদকবিরোধী অভিযানের ঘোষণা দেন। এ অভিযানে ১২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তাদের অধিকাংশই শহুরে দরিদ্র মানুষ। এর মধ্যে ফিলিপাইন ন্যাশনাল পুলিশের হাতে মারা গেছে আড়াই হাজারের বেশি মানুষ।
হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, মাদকের চোরাচালান এবং অপব্যবহার শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই বড় সমস্যা। দেশের জেলখানায় যাঁরা আছেন, তাঁদের ৭৫ শতাংশই মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাঁদের অধিকাংশই মাদক ব্যবসা এবং চোরা কারবারির সঙ্গে জড়িত।
মাদকের অপব্যবহার রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনটি পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। চাহিদা কমানো, জোগান কমানো এবং ক্ষতি হ্রাস। চাহিদা এবং জোগান হ্রাসে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন প্রজন্মকে মাদক থেকে বিরত রাখতে হবে। তা না হলে শতভাগ সফল হওয়া সম্ভব নয়। মাদকের অপকারিতা ও ক্ষতির বিষয়ে সবাইকে জানাতে হবে, তুলে ধরে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণে শূন্য সহিষ্ণুনীতি অনুসরণ করা হচ্ছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অল্প সময়ে বিপুল লাভের আশায় অনেকেই মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদী পার হলেই ৩০ টাকার ইয়াবা ১০০ টাকা দাম হয়। টেকনাফ থেকে কক্সবাজার এলে দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০ টাকায়। চট্টগ্রামে এটি ৩০০ টাকা এবং ঢাকায় এলে ৫০০ টাকা হয়ে যায়। এত লাভ আর কোনো ব্যবসায় নেই। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বৈধ ব্যবসায় ১০ শতাংশ লাভ করা যায় না। এ কারণেই যত দিন যাচ্ছে আরও ভয়ংকর মাদক আসছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুস সবুর মণ্ডল সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা কর্মশালায় তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, মাদকসেবী এবং মাদক কারবারিদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওই তালিকায় ৭০ হাজার মাদকসেবীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তালিকায় এখন পর্যন্ত ১০ হাজার কারবারির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সবুর মণ্ডল বলেন, দেশে ৬ থেকে ৭ মিলিয়ন মাদকসেবী রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। এই বিপুলসংখ্যক মাদকসেবীর চিকিৎসা দেওয়া প্রায় অসম্ভব। মাদকসেবীদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা নিশ্চিত করা জরুরি বলেও তিনি জানান।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হাবিবুর রহমান বলেন, দেশে মাদক প্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) এবং কোস্টগার্ড কাজ করে। দেশের ভেতরে মাদক নিয়ন্ত্রণে অনেক সংস্থা কাজ করে। সংস্থাগুলোর মধ্যে পুরোপুরি সমন্বয় নেই। মাদক নিয়ন্ত্রণে সব সংস্থার সমন্বয় প্রয়োজন।
ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব আক্তার হোসেন ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মোকাব্বির হোসেন। নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন ঢাকা বিভাগের তিন জেলা প্রশাসক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার, ঢাকা (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।