যানবাহন
যানবাহন

মাদকাসক্তি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হচ্ছে

মাদকাসক্তি পরীক্ষার সনদ জমা না দিলে নতুন লাইসেন্স ও নবায়নের আবেদন গ্রহণ করা হবে না। পরীক্ষা হবে টার্মিনালেও।

যানবাহন চালকদের জন্য মাদকাসক্তি পরীক্ষা বা ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে সরকার। পেশাদার চালকদের মাদকাসক্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে।

সরকার দুইভাবে মাদকাসক্তি পরীক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায়। প্রথমত, চালকদের নতুন লাইসেন্স ও পুরোনো লাইসেন্স নবায়নের আবেদনের সঙ্গে মাদকাসক্তি পরীক্ষার সনদ জমা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে কিট দিয়ে লালা পরীক্ষার মাধ্যমে মাদকসেবী চালক শনাক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। সূত্রটি বলছে, নতুন পেশাদার লাইসেন্স পাওয়া ও নবায়নের ক্ষেত্রে চালকদের নিজ খরচে মাদকাসক্তি পরীক্ষা করিয়ে সনদ নিতে হবে। নইলে আবেদন গ্রহণ করা হবে না। টার্মিনালে কিট দিয়ে পরীক্ষার খরচটি সরকারিভাবে বহনের চিন্তা রয়েছে।

*শুরুতে পেশাদার চালকদের ক্ষেত্রে পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে *মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোও পরীক্ষার পক্ষে বলে দাবি করছে

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে গত ২২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চালকদের মাদকাসক্তি পরীক্ষা চালুসহ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কিছু নির্দেশনা দেন। এরপর গত ২৭ অক্টোবর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এক সভায় মাদকাসক্তি পরীক্ষা চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে গত ১২ নভেম্বর বিআরটিএর পরিচালক (প্রশাসন) আবদুল আজিজকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে অংশীজনদের রাখা হয়েছে।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দ্রুতই মাদকাসক্তি পরীক্ষার বিষয়টি কার্যকর করতে চান।

পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, দেশে পরিবহন শ্রমিক আছে ৭০ লাখের মতো। বিআরটিএর হিসাবে, দেশে চালকের লাইসেন্স রয়েছে ৩৮ লাখের মতো। এর মধ্যে পেশাদার প্রায় ১৫ লাখ। মাদকসেবী চালকের কারণে কী পরিমাণ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, এ বিষয়ে সাম্প্রতিক কোনো গবেষণা পাওয়া যায়নি। তবে ২০০৭ সালে ব্র্যাকের রোড সেফটি কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ভারী যানবাহন (বাস-ট্রাক) চালকদের প্রায় ৬৯ শতাংশ মাদক সেবন করেন।

দ্রুতই মাদকাসক্তি পরীক্ষার বিষয়টি কার্যকর করতে চাই
নূর মোহাম্মদ মজুমদার, বিআরটিএর চেয়ারম্যান

সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী, মদ্যপান বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে চালক মোটরযান চালালে ৩ মাসের কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। পাশাপাশি চালকের দোষসূচক এক পয়েন্ট কাটার কথা বলা হয়েছে আইনে।

পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোও মাদকাসক্তি পরীক্ষার পক্ষে বলে জানিয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান প্রথম আলোকে বলেন, মাদকাসক্তি পরীক্ষায় তাঁরা সর্বাত্মক সহায়তা দেবেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৮ সালে তাঁরা নিজেরাই মাদকাসক্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

মাদকাসক্তি পরীক্ষায় আমরা সর্বাত্মক সহায়তা দেব
শাজাহান খান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের সময় মাদকাসক্তি পরীক্ষা সহজেই বাস্তবায়ন সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হলো, অনেক চালক লাইসেন্স নেওয়ার পর আর নবায়ন করতে যান না। কয়েক লাখ চালকের লাইসেন্সই নেই। এ জন্য সড়ক ও টার্মিনালে নিয়মিত পরীক্ষা করা দরকার। কিন্তু টার্মিনালে পরীক্ষা করতে গেলে চালকদের বিরোধিতা ও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে।

মাদক গ্রহণ করে যানবাহন চালানো সব দেশে নিষিদ্ধ বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাস টার্মিনালের পাশাপাশি সেতুর টোলপ্লাজাতেও মাদক পরীক্ষা করা দরকার। তিনি বলেন, বিআরটিএ প্রতিবছর ফি ও কর বাবদ দুই হাজার কোটি টাকা জনগণের কাছ থেকে নিচ্ছে। মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে মাদকাসক্তি পরীক্ষার ব্যয়টি সরকারিভাবেই বহন করা উচিত।