শেষ মুহূর্তে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে মহাজোটের প্রার্থী নিয়ে ঘটল নাটকীয় ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার ভিডিও সমাবেশে টাঙ্গাইলের সাতটি আসনের দলীয় প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। কিন্তু তিনি পরিচয় করাননি টাঙ্গাইল-৫ আসনের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ ছানোয়ার হোসেনকে।
পরিচয় করিয়ে না দিলেও ছানোয়ার নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে আসনটিতে চতুর্মুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে আয়োজিত ভিডিও সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘টাঙ্গাইল-৫ আসনে আমরা ছানোয়ারকে মনোনয়ন দিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের জাতীয় পার্টির শফিউল্লাহ আল মুনির সে–ও প্রার্থী। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের মহাজোটের সমঝোতা হয়েছে। কাজেই ঐক্যটাও আমাদের ধরে রাখা একান্তভাবে প্রয়োজন।’
ভিডিও সমাবেশের পর আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছানোয়ার হোসেন তাঁর সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করে পৌর উদ্যান থেকে মেইন রোডে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে যান। সেখানে কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘নেত্রী বলেছেন এখানে নৌকাও আছে, লাঙ্গলও আছে। আপনারা যাঁরা নৌকার কর্মী আজ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ুন, নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য।’
জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিউল্লাহ আল মুনির বলেন, ‘১০ বছর ধরে আমি এলাকায় কাজ করছি। আমার দল এবং মহাজোট আমার মূল্যায়ন করেছে। ভিডিও সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেই মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে আমার কথা বলেছেন।’
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি এবার আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি উভয়েই দাবিদার ছিল। প্রথমে আওয়ামী লীগ জেলার সব আসনে মনোনীত ব্যক্তিদের চিঠি দিলেও এই আসনে ছানোয়ার চিঠি পেয়েছেন এক দিন পর। দলীয় প্রতীকের চিঠিও তিনি অন্য প্রার্থীদের থেকে অনেক পরে হাতে পান।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন মাহমুদুল হাসান। আর মুরাদ সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাথাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। বর্তমান সাংসদ ছানোয়ার, মাহমুদুল হাসান, শফিউল্লাহ আল মুনির, মুরাদ সিদ্দিকীসহ এই চার শক্তিশালী প্রার্থীর কারণে নির্বাচন জমজমাট হয়ে উঠেছে। জেলার অন্য আসনগুলোতে নির্বাচনী আমেজ তেমন না থাকলেও এই আসনটি প্রচারণায় মুখর এবং উত্তেজনায় ভরপুর।
বিএনপির প্রার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, এখানে তাঁর ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। কিন্তু মামলা–হামলা করে তাঁর কর্মীদের মাঠে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি অবশ্যই বিজয়ী হবেন।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিউল্লাহ আল মুনির বলেন, দলীয় ভোটের বাইরেও তাঁর একটি ভোটব্যাংক রয়েছে। তাই তিনি বিজয়ের শতভাগ আশা করেন।
ছানোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৪ সালে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। দলের নেতা–কর্মীরাও ঐক্যবদ্ধ। তাই তাঁর বিজয় সুনিশ্চিত।
মুরাদ সিদ্দিকী বলেন, এর আগেও তিনি তিনবার এ আসনে নির্বাচন করেছেন। কারচুপি ও ষড়যন্ত্র করে এর আগে তাঁকে পরাজিত করা হয়েছে। তিনি মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত টাঙ্গাইল গড়ার প্রত্যয় নিয়ে তৃণমূলের মানুষের কাছে যাচ্ছেন। মানুষের কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছেন। এ আসনের মানুষ এবার তাঁকে বিজয়ী করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ওই চার প্রার্থী ছাড়াও এখানে ইসলামী আন্দোলনের খন্দকার ছানোয়ার হোসেন, বিএনএফের শামীম আল মামুন, খেলাফত আন্দোলনের সৈয়দ খালেদ মোস্তফা ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবু তাহের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।