মরিচের দামে খুশি চাষিরা

জামালপুর জেলায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে ব্যাপক খুশি চাষিরা। বাজারে বিক্রির জন্য খেত থেকে মরিচ তুলছেন এক কৃষক। গতকাল সকালে মেলান্দহ উপজেলার মধ্যের চর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো-PIC-2
জামালপুর জেলায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে ব্যাপক খুশি চাষিরা। বাজারে বিক্রির জন্য খেত থেকে মরিচ তুলছেন এক কৃষক। গতকাল সকালে মেলান্দহ উপজেলার মধ্যের চর এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো-PIC-2

এবার জামালপুরে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। মরিচের জন্য বিখ্যাত জামালপুরের কৃষকের খেত আর আঙিনাজুড়ে এখন শুধু মরিচ আর মরিচ। অন্য ফসলের তুলনায় এবার মরিচের ভালো দাম পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মেলান্দহের মধ্যের চর এলাকার বিশাল মাঠজুড়ে শুধু মরিচ আর মরিচ। যেদিকে চোখ যায়, শুধুই মরিচ। কৃষক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা মাঠ থেকে মরিচ ওঠাতে ব্যস্ত। চাষিরা খেত থেকে কাঁচা ও পাকা মরিচ উঠিয়ে আলাদা আলাদা বস্তায়
ভরছেন। অনেকেই আবার খেতে পাইকারদের কাছে মরিচ বিক্রি করছেন। কেউ কেউ পাকা মরিচ শুকানোর জন্য বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।

মধ্যের চর এলাকার চাষি সামছুল মণ্ডল তাঁর খেত থেকে বিক্রির জন্য মরিচ উঠাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ধান আবাদ করে দাম পাই না। সবজি আবাদ করে দাম পাই না। পাট আবাদ করেছিলাম। গত বন্যায় সব পাট খাইয়ে ফেলছে। খালি লোকসান খাই। বন্যার পরই খেতে মরিচ লাগাইছি। সেই দিক থ্যাকে চিন্তা করলি এইবার মরিচের ভালোই দাম পাচ্ছি।’

চাষি সামছুল বলেন, গত বছর যে মরিচ মাত্র ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন, সেই মরিচ এবার বাজারে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে বিঘায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ হবে।

জামালপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গুণগতমানের জন্য জামালপুরের মরিচের সারা দেশে ব্যাপক চাহিদা। এই মরিচ উৎপাদন হয় সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের জেগে ওঠা চরে, মেলান্দহের মধ্যের চর, ৪ নম্বর চর, ৫ নম্বর চর এবং ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায়। জেলায় এবার ৮ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। গতবারের চেয়ে এ বছর ৬৪০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ বেশি হয়েছে।

কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে কাঁচা অবস্থায় ২৫ থেকে ৩০ মণ করে মরিচের ফলন হচ্ছে। শুকানোর পর বিঘাপ্রতি ফলন টিকবে ৯ থেকে ১০ মণ। খেত থেকে তুলেই প্রতিমণ মরিচ ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খেতে সার, বীজ ও হালসহ বিঘাপ্রতি একজন কৃষকের খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। একজন কৃষকের বর্তমান দরে মরিচ বিক্রি করে প্রায় ১০ হাজার টাকা বিঘায় লাভ হচ্ছে। অন্যদিকে শুকনা মরিচ মণপ্রতি বিক্রি করে পাচ্ছেন ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা।

মধ্যের চর এলাকার ফজর আলী বলেন, খেতে পাট ছিল। সব পাট বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে। তারপর লাভের আশায় এবার মরিচ চাষ করেছেন। তবে শীতের কারণে চিন্তায় পড়তে হয়েছিল। কুয়াশার কারণে মরিচের কিছুটা ক্ষতি হয়েছিল। তবে বেশি একটা ক্ষতি হয়নি। এবার খেতে অনেক মরিচ হয়েছে। বাজারে দামও অনেক ভালো। এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। মরিচ বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ হওয়ার আশা করছেন তিনি।

জামালপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলায় এবার মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। শীতের শুরুর দিকে কুয়াশার কারণে কিছু মরিচখেতে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে কৃষকের কোনো ক্ষতি হয়নি। বাজারে মরিচের ভালো দাম থাকায় কৃষক এবার অনেক লাভবান হবেন।