মফিদুল হক একজন বহুমাত্রিক ও বহু গুণে গুণান্বিত মানুষ। কোনো একক পরিচয়ে তাঁকে সীমাবদ্ধ করা সম্ভব নয়। লেখক, প্রাবন্ধিক পরিচয়ের পাশাপাশি এ দেশের প্রকাশনাশিল্পকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন এ মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত অপপ্রচারকে রুখে দাঁড়িয়েছেন। যেকোনো সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটে সবার আগে রাজপথে নেমেছেন তিনি।
মফিদুল হকের একুশে পদক প্রাপ্তি উপলক্ষে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাঁর সম্পর্কে এসব কথা বলেছেন বিশিষ্টজনেরা। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। আজ মঙ্গলবার রাজধানীতে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। মফিদুল হকের নানামাত্রিক কাজের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একজন মানুষ কোনো বিষয়ে কতটা নিবিষ্ট হতে পারেন, মফিদুল হক তার প্রমাণ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঋদ্ধ এ মানুষটি তাঁর চেতনাকে আরও শাণিত করে সমাজকে সমৃদ্ধ করবেন—এ প্রত্যাশা করেন তিনি।
প্রধান অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ছাত্রজীবন থেকে মফিদুল হকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও বন্ধুত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক—সব ক্ষেত্রে তাঁর বিচরণ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যত কাজ হচ্ছে, যত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, তাদের সবার সঙ্গে মফিদুল হকের কমবেশি যোগাযোগ রয়েছে। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রকৃত অর্থে ধারণ করা, সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এবং তাকে প্রকৃত অর্থে শক্তিশালী করার কাজ করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরা, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরার কৃতিত্ব মফিদুল হকের।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, মফিদুল হকের মতো স্বচ্ছ চিন্তার মানুষ খুবই কম। তাঁর চিন্তাচেতনায় মৌলিকত্ব থাকে।
সংবর্ধিত মফিদুল হক তাঁর বক্তৃতায় এ দেশের প্রকাশনাশিল্পকে সমৃদ্ধ করা এবং এর বিকাশে অগ্রজ প্রকাশকদের কৃতিত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এখন শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে কথা হচ্ছে। নোট-গাইড বই বন্ধ করার কথা হচ্ছে। কিন্তু সৃজনশীল পদ্ধতির পড়াশোনায় সহায়ক বইয়ের যে গুরুত্ব রয়েছে, তাতে সরকারের চিন্তার সঙ্গে প্রকাশকদের সমন্বয় করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। রাজধানীর হাজারীবাগে ট্যানারি সরানোর পর একটি সংস্কৃতিপল্লি করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। সেখানে প্রকাশনাশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য প্রকাশনাপল্লি করে প্রকাশনাশিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মফিদুল হকের স্ত্রী সীমা মোসলেম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, সাবেক সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, শিশু একাডেমীর পরিচালক মোশারফ হোসেন, জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের পরিচালক আক্তারুজ্জামান, কবি আহমেদ মাযহার, শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।