একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-৪ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলেই আছেন একাধিক শক্তিশালী মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত দলের নেতা-কর্মীরা।
এই আসন থেকে নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ১৪ জন। আর বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ৭ জন। আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৪ জন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বিএনপির প্রার্থী জয়নাল আবেদীনকে পরাজিত করেন। তিনি পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৮৯ ভোট। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী জয়নুল আবেদীন পান ৭৮ হাজার ৭৮৯ ভোট।
আওয়ামী লীগ
এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইছেন ১৪ জন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বর্তমান সাংসদ নুরুল মজিদ মাহমুদ, শিল্পপতি অহিদুল হক আসলাম সানী, মনোহরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আবদুর রউফ সরদার, যুবলীগের উপশিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার সম্পাদক কাজী মো. মাজহারুল ইসলাম, মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য আবদুর রউফ, বেলাব উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা মোহাম্মদ আলী খান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন, আগামী প্রকাশনীর মালিক ওসমান গণি, অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী রইছ উদ্দিন এবং মো. নাজমুল হক, মোস্তফা কামাল পাশা, রানা চৌধুরী, সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া।
দলীয় সূত্র জানায়, নানা বিষয় নিয়ে দলীয় অনেক নেতা-কর্মীর সঙ্গে সাংসদ নুরুল মজিদ মাহমুদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাই পরিবর্তন চেয়ে বর্তমান সাংসদের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী পাঁচজন। এ নিয়ে দলের নেতা-কর্মীরা ভাগ হয়ে পড়েছেন।
দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, মূল মনোনয়ন লড়াই হবে বর্তমান সাংসদ নুরুল মজিদ মাহমুদ ও অহিদুল হক আসলাম সানীর মধ্যে। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম খান, আবদুর রউফ সরদার, কাজী মো. মাজহারুল ইসলাম ও আবদুর রউফ অনেক দিন ধরে অহিদুল হক আসলাম সানীর সঙ্গে একত্রে এলাকায় দলীয় কর্মসূচি, গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ করে আসছেন। এই চারজন শেষ পর্যন্ত অহিদুল হক আসলাম সানীকেই সমর্থন করবেন। বাকি মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সেভাবে এলাকায় আসেননি ও গণসংযোগও করেননি।
অহিদুল হক আসলাম সানী বলেন, ‘গত ১০ বছরে বেলাব-মনোহরদীর সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। এলাকার মানুষ কেবল হতাশ হয়েছেন। তাই তাঁরা এখন পরিবর্তন চান।’
নুরুল মজিদ মাহমুদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ দল। এখানে প্রতিযোগিতা থাকবেই। যাঁরা আমার বিরোধিতা করছেন, তাঁরাও আমাদের দলেরই লোক। দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হয়ে গেলে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েই কাজ করবেন।’
বিএনপি
এক-এগারোর সময় বিএনপির তৎকালীন সংস্কারপন্থী মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে সমর্থন ও দল সম্পর্কে দেওয়া বিভিন্ন ‘বিতর্কিত’ বক্তব্যের কারণে দল থেকে ছিটকে পড়েন সাবেক সাংসদ সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল। তাঁর অনুপস্থিতিতে এলাকায় দলের নেতৃত্ব দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন। সরদার সাখাওয়াত হোসেন এবার দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন।
দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, এই দুই নেতার মনোনয়ন লড়াইয়ে দ্বিধাবিভক্তিতে পড়েছেন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলেন, ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনের সাংসদ ছিলেন সরদার সাখাওয়াত হোসেন। সে সময় তিনি এলাকার উন্নয়ন করে সব মহলের প্রশংসা কুড়ান। কিন্তু এক-এগারোর সময়ের ভূমিকার কারণে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরাগভাজন হন। নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনয়ন দেয় জয়নুল আবেদীনকে। ইতিমধ্যে জয়নুল তাঁর পছন্দমাফিক লোকজন দিয়ে মনোহরদী ও বেলাব উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি গুছিয়ে নিয়েছেন। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা পেয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছেন সরদার সাখাওয়াত হোসেন। তিনি এখন পুরোনো অবস্থান ফিরে পেতে চাইছেন। অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির একটি অংশকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে আছেন জয়নুল আবেদীন।
সরদার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মনোহরদী-বেলাবতে বিএনপির জনপ্রিয়তার পাশাপাশি আমার নিজস্ব জনপ্রিয়তাও আছে। এলাকায় গত ১০ বছর ধরে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে আছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমি মাঠে কাজ করছি ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘দলের কঠিন দুঃসময়ে ২০০৮ সালে নেত্রীর আহ্বানে মনোহরদী-বেলাব এলাকার দায়িত্ব নিয়েছিলাম। সে সময় থেকে দলকে সুসংগঠিত রাখতে চেষ্টা করে গেছি। আশা করি, এবারও দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে এবং এলাকার মানুষের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ পাব।’
এই দুজনের বাইরেও বিএনপি থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া, বেলাব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান হাবিব, মনোহরদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মৃত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ও আয়কর আইনজীবী আসাদুজ্জামান।