চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় বেসরকারি ফরাজীকান্দি উয়েসিয়া কামিল মাদ্রাসার ছাত্রাবাসের বারান্দার ছাদ ধসে অন্তত ৪৩ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত ১০টায় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে ১৪ জনের অবস্থা গুরুতর।
ওই মাদ্রাসা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসাটির মূল ভবনের পাশে ‘আল আমিন শিশু সদন’ নামে একটি ছাত্রাবাস রয়েছে। ছাত্রাবাসটির ভবন চারতলা। ৪০ বছরের পুরোনো ভবনটি। কয়েক বছর আগে এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক আহম্মদ উল্লাহ বলেন, বসবাসের অনুপযোগী হলেও শিক্ষার্থীদের থাকার বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ওই ছাত্রাবাসে থেকে শতাধিক দরিদ্র শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। তাদের দেখভাল করার জন্য সেখানে একজন শিক্ষক আছেন। মাঝে মাঝে ছাত্রাবাসটির দোতলার বারান্দায় বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সভার আয়োজন করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
নবম শ্রেণির আহত শিক্ষার্থী শাখাওয়াত হোসেন ও অষ্টম শ্রেণির মো. আজহারুল ইসলাম জানায়, শনিবার রাত ১০টার দিকে আসন্ন বিজয় দিবসের প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনার জন্য ছাত্রাবাসটির দোতলার বারান্দায় তাদের ডেকে পাঠান শিক্ষকেরা। বিভিন্ন শ্রেণির শতাধিক শিক্ষার্থী ওই আলোচনায় অংশ নেয়। আলোচনা চলার সময় বিকট শব্দে বারান্দার ছাদ ধসে তাদের ওপর পড়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা দেখতে পায় অনেক শিক্ষার্থীর শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে রক্ত ঝরছে। কারও পা ভেঙে গেছে, কারও মাথা ও কপাল ফেটে গেছে, কারও কারও বুক ও পিঠ থেঁতলে গেছে। তারা দুজনও মাথা ও পায়ে ব্যথা পায়। এ সময় তাদের চিৎকারে মাদ্রাসাটির শিক্ষক ও আশপাশের লোকজন সেখানে এগিয়ে আসেন।
মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ আতাউর রহমান মুজাহিদ বলেন, ঘটনাটি জানার পর তিনি তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং এলাকাবাসীর সহায়তায় আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় ঠিক কতজন আহত হয়েছে তা এখনই সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে অন্তত ৪৩ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
পরিত্যক্ত ভবনে শিক্ষার্থীদের কেন রাখা হচ্ছে প্রশ্ন করা হলে আতাউর রহমান মুজাহিদ বলেন, ছাত্রাবাসের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের আপাতত সেখানে থাকতে দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারবেন না।
আজ রোববার ভোরে মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার কয়েকটি ওয়ার্ডে ওই মাদ্রাসার আহত শিক্ষার্থীদের ছড়াছড়ি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে অনেকেই। আহতদের প্রায় সবার বয়স ৮ থেকে ১৯ এর মধ্যে। বেশির ভাগই হেফ্জ শাখা ও এতিমখানার শিক্ষার্থী।
আহত এক শিক্ষার্থী আকরাম হোসেনের মা ফিরোজা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলেটার মাথার ওপর ছাদ ভেঙে পড়ছে। তার মাথা ও পা জখম হয়েছে। আল্লায় জানে সে বাঁচব কিনা। ছেলের কিছু হয়ে গেলে আমি কম নিয়ে বাঁচব?’
মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ কে এম মাহাবুবুর রহমান বলেন, শনিবার রাতে তাঁর হাসপাতালে ওই মাদ্রাসার ২৬ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তারা হচ্ছে আরিফ হোসেন (১৪), মো. আকরাম (১৫), হাবিবুর রহমান (১৩), ইসমাইল হোসেন (১৮), আহম্মদ আলী (১০), সাব্বির (১০), জোবায়ের (১১), শিহাব হোসেন (১৪), সুজন (১২), মো. হোসেন (১৪), সাফায়াত (১৪), তানভির হোসেন (১০), ইব্রাহিম মিয়া (৯), নাঈম (১০), মিরাজ (৯), আব্দুল আজিজ (১৪), তরিকুল ইসলাম (১২), মো. তামিম (৯), রাকিবুল হাসান (১২), আজহারুল ইসলাম (১৫), কামাল হোসেন (১০), আইন উদ্দিন (১৩), আরিফ হোসেন (১৪) এবং আরও তিনজন। এদের মধ্যে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয় আটজনকে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিরা শঙ্কামুক্ত। তাদের চিকিৎসা চলছে।
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, তাঁর হাসপাতালে ওই মাদ্রাসার ১৭ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তারা হচ্ছে বিল্লাল (১৩), আবদুল্লাহ (১২), তানভির (১২), মাজহারুল ইসলাম (১৩), নাহিদ (১৪), দীন মোহাম্মদ (১৪), ইয়াসিন (১০), আমিন (৮), হোসাইন (১৪), জয়নাল (১৩), সিয়াম (৮), হাফি (১২), সজিব হোসেন (১৪), রবিউল হাসান (১৯), আবুল কালাম (১২), হাসান (১৪) ও ইসমাইল হোসেন (৮)। গুরুতর আহত সিয়ামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বিল্লাল, আবদুল্লাহ, নাহিদ, হোসাইন ও সজিবকে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহত শিক্ষার্থীদের মাথা, বুক ও পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ জখম হয়েছে।
চাঁদপুরের সিভিল সার্জন মো. শাখাওয়াত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখানে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে চিকিৎসক ও সেবিকাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।