রাজধানীর মগবাজারে শরমা হাউসে গ্যাস বিস্ফোরণে সাতজন মারা গেছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের ( ডিএমপির) কমিশনার শফিকুল ইসলাম এ কথা জানিয়েছেন।
ডিএমপি কমিশনার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এখন পর্যন্ত তারা জানতে পেরেছেন, মগবাজারের শরমা হাউসে গ্যাস বিস্ফোরণ আশপাশের সাতটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া তিনটি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছেন মোট সাতজন।
তবে রাত ১১ টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণে তিনজন মারা গেছেন। মগবাজারের একটি ভবনে সন্ধ্যা ৭ টা ৩৪ মিনিটে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কীভাবে এই বিস্ফোরণ তা জানার জন্য কমিটি গঠন করেছেন। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, গ্যাস বিস্ফোরণ থেকে এই বিস্ফোরণ। ভবনের নিচতলায় ফাস্ট ফুডের দোকান ছিল। দ্বিতীয় তলায় একটা শো রুম ছিল। সেখানে ফ্রিজ ছিল। তিন তলায় ছিল একটা স্টুডিও। ভবনের সামনের সড়কে কাজ চলছে। সেখানেও গ্যাস ও ইলেকট্রনিক তার রয়েছে। কীভাবে এই বিস্ফোরণ তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।
এদিকে প্রথম আলোর প্রতিবেদকেরা সরেজমিনে ছয়জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হতে পেরেছেন। এর মধ্যে মগবাজারে কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে ২ জন। তাঁরা হলেন, সুবহানা নামের ৯ মাসের এক শিশু এবং অজ্ঞাতনামা (৪০) এক ব্যক্তি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান শিশু সুবহানার মা জান্নাত। ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া এ খবর নিশ্চিত করেন। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়ার পর দুজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সেখানে রাত সাড়ে ১১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান স্বপন (৩৫) নামের আরও একজন।
এদিকে ঘটনার পরপর আহত প্রায় ২শ জনকে মগবাজারে কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাহ পরাণ। তিনি রাত ১১টায় প্রথম আলোকে বলেন, সেখানে দুজন মারা গেছেন। আহতদের মধ্যে যারা গুরুতর তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এর আগে রাত ১০টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, বার্ন ইউনিটে ভর্তি ১৭ জনের মধ্যে যে ৩ জনের অবস্থা আশংকাজনক তাদের ৯০ শতাংশের বেশি বার্ণ। আর বাকী ১৪ জনের বার্ন কম, তবে তাদের শরীরে কাটা, ছেড়া আছে। আর দুজনকে মৃত অবস্থায় বার্ণ ইউনিটে আনা হয়েছে। তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মগবাজারের শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়কের তিনতলা একটি বাড়ির নিচতলা বিস্ফোরণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, শরমা হাউসে (৭৯/১) সারকুলার রোডে তিন তলা পুরাতন ভবনের নিচ তলায় গ্যাস বিস্ফোরণ হয়। অনেকে হতাহত হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই বিস্ফোরণে দুটি বাসের যাত্রীরা হতাহত হয়েছেন। অন্তত ৪৮ জনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। এর মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয় ১২ জনকে।
প্রত্যক্ষদর্শী পথচারী জান্নাত আরা বলেন, ঘটনাস্থলের অদূরে একটি ভবনে নিচে তিন দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় বিকট তিনি শব্দ শুনতে পান। তিনি যে ভবনের নিচে ছিলেন, সেটির কিছু পলেস্তারা ধসে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের ওপর পড়ে। এরপর ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। সেই আগুন উড়ালসড়কের ওপরে ও নিচে যাত্রীবাহী বাসে ছড়িয়ে পড়ে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
বাসযাত্রী সৈয়দ ইকবাল হোসেন (৫০) বলেন, বাসটি মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচে পৌঁছালে ফ্লাইওভারের ওপরে একটি বাসে আগুন জ্বলতে দেখেন। সেই বাস থেকে চূর্ণবিচূর্ণ কাচ ও আগুনের ফুলকি নিচে পড়তে থাকে। এরপর তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। চেতনা ফিরলে দেখেন তিনি হাসপাতালের বিছানায়।
এদিকে ঘটনাস্থলে তথ্য সংগ্রহের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন পুলিশের রমনা বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। এ সময় সাংবাদিকেরা প্রতিবাদ করলে তিনি সরে যান।