চারদিকে উৎসবের আমেজ। শিশু-বৃদ্ধ সব বয়সীর ভিড়ে মুখর মেলা প্রাঙ্গণ। দোকানিদের হাঁকডাক। চলছে জমজমাট বিকিকিনি। সাতকানিয়ার পাহাড়বেষ্টিত মাদার্শা ইউনিয়নের বাবুনগরে বসেছে এই গ্রামীণ মেলা। তবে মেলা ছাপিয়ে এর মূল আকর্ষণ বলীখেলা। যা পরিচিত মক্কার বলীখেলা নামে। প্রতি বছর ৭ বৈশাখ বসে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা ও খেলার আসর। এবারের বলীখেলায় যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন রামুর দিদার ও উখিয়ার সামশু বলী।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, ১৩৪ বছর আগে এ এলাকার জমিদার মো. আবদুল কাদের বক্স চৌধুরী বাঙালি ঐতিহ্য তুলে ধরতে ও এলাকার লোকজনকে বিনোদন দেওয়ার জন্য এ বলীখেলা শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর বৈশাখের ৭ তারিখ এ বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবার ছিল বলীখেলার ১৩৫তম আসর।
বলীখেলা দেখতে ২০ এপ্রিল জড়ো হয়েছিল দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। টেকনাফ, কক্সবাজার, রামু, উখিয়া, বাঁশখালী, মহেশখালী ও লোহাগাড়া থেকে প্রায় ২৫ জন নতুন-পুরোনো বলী খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সবশেষে চূড়ান্ত খেলায় লড়েন সামশু ও দিদার বলী। তাঁদের মধ্যে প্রায় আধ ঘণ্টাব্যাপী লড়াইয়ে কেউ কাউকে হারাতে পারেননি। তাই বলীখেলার আয়োজক কমিটি উভয় বলীকেই যুগ্ন চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে।
বাবুনগরের বাসিন্দা ফরিদ উদ্দিন (৫৫) বলেন, প্রতিবছর বলীখেলার সময় আমাদের আনন্দ বেড়ে যায়। কারণ বলীখেলা উপলক্ষে স্বজনেরা বেড়াতে আসে। সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়।
আট ও দুই বছরের ছেলেকে নিয়ে বাঁশখালীর সরল থেকে খেলা দেখতে এসেছেন আবদু শুক্কুর (৪৩)। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় প্রতিবছর বলীখেলা দেখতে আসি। কেবল এবারই সন্তানদের নিয়ে এসেছি। খেলা দেখি এবং মেলায় ঘুরে কিছু বাজারও করি।’
চ্যাম্পিয়ন রামুর দিদার বলী বলেন, ‘এ মাঠে আমি ১২ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। পুরস্কার পাওয়ার আশায় নয়, হাজার হাজার দর্শকের সামনে নিজেকে তুলে ধরতেই আমি এই মক্কার বলীখেলার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি।’
বলীখেলার আয়োজক মাদার্শা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জমিদার আবদুল কাদেরের নাতি নাজমুল আলম চৌধুরী জানান, ‘আমার দাদার প্রতিষ্ঠিত এ বলীখেলা মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছে। সে হিসেবে দাদার স্মৃতি ও দেশের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য আমরাও প্রতিবছর এই খেলার আয়োজন করে যাচ্ছি।’