নির্মাণশ্রমিক আনোয়ার হোসেন ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ যাবেন। এ জন্য ট্রেনের টিকিট নিতে চট্টগ্রাম স্টেশনে এসেছিলেন ভোররাত চারটায়। স্টেশনেই সাহ্রি খেতে হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর কাউন্টার সামনে যেতে যেতে সকাল ১০টা হয়ে যায়। কিন্তু ততক্ষণে ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেসের টিকিট শেষ। নিরুপায় হয়ে নিয়েছেন ঢাকাগামী চট্টলা এক্সপ্রেসের টিকিট।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম স্টেশনে কথা হয় আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। টিকিট না পাওয়ায় হতাশ আনোয়ার বলেন, স্টেশনে আসার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছেন রাত তিনটায়। চারটা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। সাহ্রি এখানেই খেতে হয়েছে। কিন্তু ছয় ঘণ্টা অপেক্ষার পরও কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাননি। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ঢাকার টিকিট নিতে হয়েছে। এখন ভৈরবে নামতে হবে।
আনোয়ার হোসেনের মত অবস্থা হয়েছে চাকরিজীবী মাইসুরুল ইসলামের। তিনিও ময়মনসিংহ যাবেন। কিন্তু বিজয় এক্সপ্রেসের টিকিট না পেয়ে নিতে হয়েছে ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেসের টিকিট। তিনি বলেন, এখন দুটি টিকিটের জন্য দিতে হয়েছে ১ হাজার ৩২০ টাকা। কিন্তু বিজয়ের টিকিট অর্ধেক টাকায় পাওয়া যেত। নামতে হবে ভৈরবে। এরপর বাসে যেতে হবে। কিছু করার নেই, বাড়িতে তো যেতে হবে।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের অগ্রিম টিকিট বিক্রির তৃতীয় দিন ছিল আজ। এ দিন আগামী শুক্রবারের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। ফলে আগের রাত থেকেই চট্টগ্রাম স্টেশনে ভিড় করতে শুরু করেন লোকজন। প্রথম দুই দিন এই স্টেশনে তেমন ভিড় ছিল না।
চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক রতন কুমার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের টিকিট নিতে আগের দিন সন্ধ্যা থেকে লোকজন স্টেশনে লাইনে দাঁড়াতে শুরু করেন। রাতের মধ্যে প্রতিটি লাইনে এক থেকে দেড় শ মানুষ ছিলেন। ফলে আজ ভোরে বা সকালে যারা আসছেন, তাঁদের অনেকেই টিকিট পাননি।
আজ সকালে চট্টগ্রাম স্টেশনে দেখা যায়, স্টেশনের প্রতিটি কাউন্টারে মানুষের দীর্ঘ সারি। নারীদের জন্য কাউন্টারেও ভিড় ছিল। আগের দিন রাতে অনেকেই পত্রিকা, প্যাকেটের কাগজ নিয়ে স্টেশনে বসেছিলেন। সকালে তা পরিষ্কার করছিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
লায়লা বেগম নামের চাঁদপুরগামী এক যাত্রী সকাল ১০টায় বলেন, তিনি ভোরে এসেছেন টিকিট নেওয়ার জন্য। কিন্তু এখনো পাননি। তবে কাউন্টার থেকে বলা হয়েছে টিকিট পাওয়া যাবে। বাসের তুলনায় ট্রেনে যাওয়া-আসা সহজ ও নিরাপদ। তাই পরিবার নিয়ে ট্রেনে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যান। এবারও যাবেন।
এবার জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হচ্ছে। একজনকে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট দেওয়া হয়। এ জন্য অবশ্য অন্যদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে এর আগে বিভিন্ন সময় টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ জন্যই এবার জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি দেখানোর বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।