ভোটের ব্যবধানে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে এবারের নির্বাচন। চট্টগ্রামের ১৬ আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট যেখানে ৮৫ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে, সেখানে বিএনপি জোট পেয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। অথচ এর আগের নির্বাচনগুলোতে এই দুই দলের ভোট ছিল প্রায় সমান।
২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোট চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে চারটিতে জিতেছিল। সেবার চট্টগ্রামে তারা ৪৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। আওয়ামী লীগ জোট জিতেছিল ১১টি আসনে। তাদের ভোট ছিল ৪৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।
বড় ব্যবধানে জয় ছিল জামায়াতের আ ন ম শামসুল ইসলামের—প্রায় ৬০ হাজার ভোট। অন্যগুলোতে ব্যবধান ছিল প্রায় ৮ থেকে ৩৭ হাজার ভোটের।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ জোটের মধ্যে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৬২ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন মিরসরাইয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। ১২টি আসনে দুই লাখের বেশি ব্যবধানে জিতেছে আওয়ামী লীগ।
১৬ আসনে আওয়ামী জোট মোট ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার ২৬৯ ভোট পেয়েছে। ১৬ আসনেই তারা জয়ী হয়েছে। এটি মোট প্রদত্ত ভোটের ৮৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। ১০টি আসনে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। তিনটিতে প্রায় ৮৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।
অন্যদিকে ১৬ আসনে বিএনপি জোটের প্রার্থীরা মোট ৪ লাখ ৬০ হাজার ৯৪৯ ভোট পান। এটি মোট প্রদত্ত ভোটের ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এই জোটের ১০ জন তাঁদের জামানত হারিয়েছেন। চট্টগ্রাম-১৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী তৃতীয় হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন প্রদত্ত ভোটের ১ দশমিক ২২ শতাংশ। সন্দ্বীপে বিএনপি প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ ভোট।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা তো প্রহসনের নির্বাচন। সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে এজেন্ট—কেউ কেন্দ্রে যেতে পারেননি। সরকারি দলের লোকজন আগের দিন রাত থেকে ভোট নিয়েছে। এ কারণে এই ব্যবধান।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম-১১ আসনে এম এ লতিফের কাছে হেরেছেন। এখানে তিনি ১৫ শতাংশ ভোট পান। তাঁর জামানত রক্ষা হলেও বাজেয়াপ্ত হয়েছে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের জামানত। চট্টগ্রাম থেকে তিনি একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছেন।
২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে আসন ছিল ১৫টি। সেবার বিএনপি–জামায়াত জোট ১৩টি আসনে জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগ দুটি আসনে জেতে। মোট প্রদত্ত ভোটের ৫৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ পেয়েছিল বিএনপি জোট। বিপরীতে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৪১ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
ভোটের ব্যবধানে এত ফারাকের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল) প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার ভোটাররা ধারাবাহিকতা চেয়েছেন। পরিবর্তন চাননি। আমাদের নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা যেভাবে উৎসাহ নিয়ে কেন্দ্রে ভোট দিতে গেছেন, সেভাবে বিএনপির নেতা–কর্মী–সমর্থকেরা যায়নি। এর মূল কারণ নেতৃত্ব–সংকট। বিএনপি জিতলে নেতৃত্বে কে থাকবেন, তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে ছিলেন সমর্থকেরা।