অবশেষে ভেঙে পড়ল মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের রাজা সীতারাম রায়ের নির্মিত অষ্টকোণ মন্দির। সংস্কার না করায় প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো পুরাকীর্তিটি গত বুধবার বিকেলে ধসে পড়ে।
মাগুরা জেলা শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে মধুমতী-নবগঙ্গা নদীবিধৌত জনপদ মহম্মদপুর উপজেলা। রাজা সীতারাম রায়ের তৎকালীন ভূষণা (বর্তমান ফরিদপুর-মাগুরা) রাজ্যের রাজধানী ছিল এই মহম্মদপুর। মোগলদের বিরুদ্ধে রাজা সীতারামের স্বাধীনতাসংগ্রামের বীরত্বের ইতিহাস আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
সরেজমিনে দেখা যায়, অনিন্দ্য সুন্দর স্থাপনা অষ্টকোণ মন্দির ধসে পড়ে রয়েছে। মন্দিরের পাশের বাসিন্দা শ্রী কানুতেওয়ারী জানান, মন্দিরটির দালান আট কোণ ছিল। ৫০ থেকে ৬০ বছর আগে অনেক উঁচু ছিল। ছিল নানা কারুকাজ। সংরক্ষণ আর সংস্কার না করায় মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একশ্রেণির লোকজন মন্দিরের ইট খুলে নেওয়ায় এর অবশিষ্ট অংশও বিলীন হয়ে গেল।
দেখা গেছে, কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে রাজা সীতারাম রায়ের দোতলা ভবন, দোলমঞ্চ, তাঁর খনন করা দিঘি। রাজবাড়িটির জানালা-দরজা সব খুলে নিয়ে গেছে। প্রভাবশালীরা রাজার জায়গা জমি করে দখল করে নিয়েছে। সংস্কারের তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
মুর্শিদাবাদের নবাব সরকারের একজন আমলা রাজা সীতারাম রায়ের নির্মিত অসংখ্য নান্দনিক কারুকার্য খচিত স্থাপনা রয়েছে। এসব প্রত্নস্থান, যা স্থানীয়ভাবে রাজবাড়ি নামে পরিচিত। সপ্তদশ-অষ্টদশ শতাব্দীতে এখানে পত্তন হওয়া উন্নত এক জনপদের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যিনি আমলা থেকে জমিদারি এবং পরে স্বীয় প্রতিভাবলে রাজা উপাধি লাভ করেন।
উপাধি লাভের পর সীতারাম রাজার মতোই রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন। তিনি নবাব সরকারের রাজস্ব প্রদান বন্ধ করে স্বাধীন, সার্বভৌম রাজার মতোই জমিদারিতে প্রত্যাবর্তন করেন নিজস্ব শাসনব্যবস্থা। জমিদারি সুরক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে সীতারাম স্থানটিতে গড়ে তোলেন অসংখ্য দুর্ভেদ্য দুর্গ, কাচারিবাড়ি পরিখা পরিবেষ্টিত রাজপ্রাসাদ, পূজার্চনার জন্য দেবালয় নির্মাণ, জনস্বার্থে খনন করেন বেশ কিছু বিশালাকার জলাশয়।
বাংলা একাডেমির লোকজ ঐতিহ্যের সংগ্রাহক ও মহম্মদপুরের ইতিহাস ঐতিহ্য গ্রন্থের লেখক সালাহ্ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সীতারাম যুগে যুগে স্বাধীনতাসংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এক ‘চির উন্নত শির’ রাজা। তিনি ইতিহাসের গৌরবজনক স্থানে নিজের নামকে অমর করে রেখেছেন। নতুন প্রজন্মের জন্য ইতিহাসের এসব অলিখিত উপাদান সংরক্ষণের বিকল্প নেই।
মহম্মদপুরের ইউএনও চৌধুরী রওশন ইসলাম বলেন, মোগল আমলের স্বাধীনচেতা রাজা সীতারামের রাজধানী খ্যাত মহম্মদপুরের প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ ও স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।