ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর: দুটি ড্রোন কিনতে বরাদ্দ ৬ কোটি টাকা

ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর
ছবি: ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

ভূমি জরিপের জন্য দুটি সার্ভেয়িং ড্রোন কিনতে যাচ্ছে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর। দুটি ড্রোন কেনার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ছয় কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি ড্রোনের দাম বাবদ বরাদ্দ তিন কোটি টাকা।

ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় ড্রোন দুটি কেনা হচ্ছে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ড্রোন দুটি কেনার জন্য ৬ কোটি টাকা ছাড়াও এগুলো আমদানি করতে কাস্টম শুল্ক বাবদ ৫৫ লাখ এবং মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্বাসনের জন্য ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ ড্রোন দুটির পেছনে ৭ কোটি ৫ লাখ টাকা খরচ করতে যাচ্ছে অধিদপ্তর।

ড্রোন উৎপাদনকারী চারটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, লাইডার সেন্সরসমৃদ্ধ বা ভূমি জরিপ ও মানচিত্র তৈরির কাজে ব্যবহৃত প্রতি ড্রোনের দাম পৌনে ২ লাখ থেকে ১৮ লাখ টাকা।

বাংলাদেশে ড্রোন আমদানিকারক একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, জরিপ করার ড্রোন ১২ থেকে ১৮ লাখ টাকার মধ্যেই হয়। তবে ড্রোনের সঙ্গে লাইডার, ব্যাটারিসহ আরও কিছু অ্যাকসেসরিজ প্রয়োজন হয়। সে জন্য পুরো সেটের দাম ১ কোটি ১০ লাখ টাকার মতো পড়ে। যদি খুব ভালো সেট হয়, সে ক্ষেত্রে তার দাম সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা হতে পারে। এর বেশি নয়।

অধিদপ্তরের পরিচালক (ভূমি রেকর্ড) ও প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভূমি জরিপ করার জন্য বর্তমানে বাজারে যেসব ড্রোন আছে, তার মধ্য থেকেই আমরা কিনব।’

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভূমি জরিপের কাজে বিশ্বব্যাপী লাইডার সেন্সর-সমৃদ্ধ ড্রোন ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ভূমি অধিদপ্তরও জরিপকাজ সূক্ষ্মভাবে করতে লাইডার সেন্সর–সমৃদ্ধ ড্রোন কিনবে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান উইংস্ট্রার ভূমি জরিপ ও মানচিত্র তৈরির জন্য বাজারে এনেছে উইংস্ট্রা ওয়ান ড্রোন। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, লাইডার সেন্সর–সমৃদ্ধ উইংস্ট্রা ওয়ান ড্রোনটি বাংলাদেশ কিনতে চাইলে খরচ পড়বে ২১ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার বা ১৭ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা। শিপিং ও হস্তান্তর, ট্যাক্স ও আমদানি ফি ছাড়াই এই খরচ পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইন্সপায়ার্ড ফ্লাইটের লাইডার সেন্সর–সমৃদ্ধ জরিপ ড্রোন ‘IF 750’। যার বাজারমূল্য ১৪ হাজার মার্কিন ডলার বা ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

বিশ্ব ড্রোন বাজারে আধিপত্যকারী প্রতিষ্ঠান চীনের ডিজিআই। জরিপকাজে ব্যবহারের জন্য প্রতিষ্ঠানটির লাইডার–সমৃদ্ধ ড্রোন ‘matrice 300 rtk’। যার দাম ১৩ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার বা ১১ লাখ ২২ হাজার টাকা। জরিপের জন্য প্রতিষ্ঠানটির আরেকটি ড্রোন ‘Phantom 4 RTK’। যার দাম ৬ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার বা ৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা। ‘Phantom 4 Pro+ V2.0’ নামে ডিজিআইয়ের আরেকটি জরিপ ড্রোন রয়েছে। যার দাম ২ হাজার ৪৯ মার্কিন ডলার বা ১ লাখ ৭৪ হাজার ১৬৫ টাকা।

মানচিত্র ও জরিপকাজে ব্যবহারের জন্য ‘eBee X’ ড্রোন তৈরি করে ফ্রান্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্সফ্লাই। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, এই ড্রোনের দাম ৪ হাজার ৭৫০ মার্কিন ডলার বা ৪ লাখ ৩ হাজার ৭৫০ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘প্রকল্প করার সময় প্রথমে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) বানানো হয়। ডিপিপি অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়ের পর একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদিত হয়। এরপর সেটা কার্যকর করার জন্য প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ হয়। আপনি বলছেন, দাম বেশি কি না! তাহলে এই যে এত লোকজন, তাঁরা দেখলেন না? এখানে অনেক বড় কর্মকর্তা জড়িত। তাঁদের চোখে বিষয়টি ধরা পড়েনি?’

ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমি ড্রোনের বাজারদর দেখিনি। ডিপিপি তৈরির সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বাজারদর দেখেছিল। আমরা যখন টেন্ডার দেব, তখন যারা সর্বনিম্ন দাম দেবে, তাদের থেকেই কিনব।’

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ড্রোন দুটি কেনার জন্য এখনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। এর জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করতে পারে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর।

শুরুতে বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার ভূমি জরিপে ড্রোন দুটি ব্যবহার করা হবে বলে জানা গেছে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, এই দুই জেলায় ভূমি জরিপ হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে। এরপর সরাসরি আর ভূমি জরিপ হয়নি। এ কারণে ড্রোন ব্যবহার করে ভূমি জরিপের জন্য শুরুতেই এই দুই জেলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ড্রোন ব্যবহার করে ভূমি জরিপ এই দুই জেলায় সফল হলে পরবর্তী সময়ে অন্যান্য জেলায়ও তা করার পরিকল্পনা আছে। তখন আরও বেশি ড্রোনের প্রয়োজন হবে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত জরিপের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় লাগে মানচিত্র তৈরিতে। এই সময় কমানোর জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হবে। আগে জরিপে এরিয়াল ফটোগ্রাফি ব্যবহৃত হতো। কিন্তু এখন বিশ্বে জরিপ ড্রোন ব্যবহার করা হয়। ড্রোনের মাধ্যমে ভিডিও নয়, কেবল ভূমির ছবি নেওয়া হবে। ড্রোন থেকে ছবিগুলো নেওয়ার পর সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রসেসিং করে ম্যাপে (মানচিত্রে) পরিণত করা হবে। এভাবে নতুন করে ম্যাপ তৈরি করা হবে। ড্রোন ব্যবহার–সম্পর্কিত বিষয়গুলো এখনো সবার কাছে পরিষ্কার নয়। কাজের মাধ্যমে বিষয়গুলো পরিষ্কার হবে।