>চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর ভূমি অফিসের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন এক কর্মকর্তা। এলাকার মানুষ খুশি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে ঢোকার আগে চোখে পড়বে সীমানাপ্রাচীরে বড় বড় অক্ষরে লাল কালি দিয়ে লেখা, ‘আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নিষ্ঠা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আমরা সচেষ্ট। নিজের কাজ নিজে করুন, দালাল ও প্রতারক থেকে দূরে থাকুন।’ অফিসের দেয়ালে ছবিসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিচয়, কার কী দায়িত্ব এবং কে কোন কক্ষে বসেন তা লেখা রয়েছে।
আর নাগরিক সনদে (সিটিজেন চার্টার) উল্লেখ রয়েছে সেবা প্রদানসংক্রান্ত বিস্তারিত বর্ণনা—কোন কাজের জন্য কত টাকা লাগবে, কোনো আইনি জটিলতা না থাকলে কত দিনের মধ্যে কাজ হবে, অফিসের কাজে সেবাগ্রহীতার কোনো অভিযোগ থাকলে ঊর্ধ্বতন কোন কোন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ জানাতে হবে ইত্যাদি। রয়েছে অভিযোগগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের মুঠোফোন নম্বর ও ই-মেইল ঠিকানা।
দুর্নীতি রোধে গত ১ নভেম্বর থেকে সেবাগ্রহীতাদের সচেতন করতে মাঠপর্যায়ে শুরু হয়েছে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, ই-নামজারি আবেদন গ্রহণ এবং তাৎক্ষণিক ভূমিবিষয়ক সেবা প্রদান ক্যাম্প। প্রথম পর্যায়ে প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন কার্যালয়ে ক্যাম্পগুলো চলবে। এরপর হাটবাজারগুলোতে তা সম্প্রসারিত হবে। এখান থেকে অভিযোগ গ্রহণ করে তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করা হবে। এসব পদক্ষেপ নিয়েছেন গোমস্তাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিন্টু বিশ্বাস। তাঁকে সহযোগিতা করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিহাব রায়হান। কিছুদিন আগে মিন্টু বিশ্বাস চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় বদলি হয়েছেন। তবে গোমস্তাপুরে তাঁর নেওয়া পদক্ষেপের সুফল পেতে শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বর্তমানে গোমস্তাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছেন শিহাব রায়হান। মিন্টু বিশ্বাসের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তিনি বজায় রেখেছেন বলে জানালেন।
সম্প্রতি গোমস্তাপুর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা হয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আক্তার আলী খানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি একজন সাধারণ মানুষকে পাঠিয়েছিলাম জমির নামজারি করার জন্য। সময়ের মধ্যে ঘুষ ছাড়াই এ কাজ হয়েছে।’ কথা হয় রহনপুরের সাঈদ আক্তারের সঙ্গে। তিনি প্রায় দেড় মাস আগে নামজারি করিয়েছেন ঘুষ ছাড়াই। রহনপুর পৌর এলাকার ইসলামনগরের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম জানান, নামজারির জন্য তিনি প্রায় এক মাস আগে আবেদন করেছেন। এ অফিসে এসে জানতে পেরেছেন, শুনানির জন্য তাঁকে নোটিশ করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মিন্টু বিশ্বাস বলেন, শুনানির পরপরই মনিরুল ইসলামের কাজ হয়ে যাবে।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতা বঙ্গপাল সরদার জানান, গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ও পার্বতীপুর ইউপির ২০-২২টি গ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও হিন্দু জনসাধারণ বাপ-দাদার আমল থেকে ধোবা পুকুরপাড়ের খাসজমিতে অবস্থিত শ্মশানে মৃতদেহের সৎকার করে আসছে। পুকুরপাড়ে রয়েছে একটি কালীমন্দিরও। একটি চক্র শ্মশান ও মন্দিরের জমি বেদখল করার জন্য সেখানে ঘর তুলে ও গাছ লাগায়। মিন্টু বিশ্বাস এ জমি দখলমুক্ত করতে সহায়তা করেন।
এসব পদক্ষেপে এই ভূমি অফিস শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত হয়েছে কি না জানতে চাইলে মিন্টু বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ভূমি অফিসগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের (ব্যতিক্রম কয়েকজন বাদে) ঘুষ বা বকশিশ গ্রহণের অভ্যাস বহু দিনের। রাতারাতি সম্পূর্ণ বদলানো সম্ভব নয়। তবে এ জন্য সেবাগ্রহীতারাও দায়ী। তাঁরা অফিসে ঢুকে জেনে–বুঝে কাজ করলেই ঘুষ ছাড়াই তাঁদের সেবা পাওয়া সম্ভব। তবে এই সময়ে ঘুষ গ্রহণ একেবারেই কমে গেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাবধান করা হয়েছে। ঘুষ নেওয়ার কথা জানতে পারলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মিন্টু বিশ্বাস জানান, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি তিনি গোমস্তাপুরে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছেন। এ অফিসের এক বিঘা খোলা জমিতে তিনি ফুল, ফল ও ঔষধি গাছ লাগিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের তহবিলে এ অফিসের মেরামত ও সংস্কার করা হয় দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে। ভালো কাজ করার পরও দেখা গেল টাকা বেঁচে গেছে। ঠিকাদারকে বলা হয়, ‘বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে ভালো কাজ করতে চাই।’ ভালো কাজ করার জন্য ঠিকাদার ওই টাকা ফেরত নেননি। সেই টাকা দিয়ে গাছ লাগানো হয়েছে।
সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয়েও একই পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মিন্টু বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি তিনি বদলি হয়েছেন। ব্যস্ততার কারণে তিনি গোমস্তাপুরে নেওয়া পদক্ষেপগুলো সদরে এখনো বাস্তবায়ন শুরু করতে পারেননি। তবে শিগগিরই শুরু করবেন।