পটুয়াখালী–২ (বাউফল)

ভিন্ন ভিন্ন সমস্যায় প্রধান দুই প্রার্থী

ভিন্ন ভিন্ন সমস্যায় রয়েছেন পটুয়াখালী–২ (বাউফল) আসনের প্রধান দুই প্রার্থী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ স ম ফিরোজের সমস্যা দলে ঐক্যের ভেতরে বিভেদ। বাউফল পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন আলাদাভাবে। প্রার্থী বলছেন, এটা তাঁর জন্য নেতিবাচক হচ্ছে।

আর বিএনপির প্রার্থী সালমা আলমের সমস্যা মাঠে উপস্থিতি কম। তাঁর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্যাতন থেকে বাঁচাতে তিনি মাঠে কম নামছেন।

গতকাল সোমবার এই নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মহাজোটের প্রার্থী, জাতীয় সংসদের বর্তমান চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের প্রচুর পোস্টার আর নির্বাচনী প্রচারসামগ্রী। তিনি সাতবার সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ছয়বার বিজয়ী হয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সালমা আলমের পোস্টার বা প্রচার খুব একটা চোখে পড়েনি। তিনি এবারই প্রথম নির্বাচন করছেন। তাঁর স্বামী শহীদুল আলম তালুকদার ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবার তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর ১১ ডিসেম্বর এলাকায় আসেন সালমা আলম। সঙ্গে তাঁর স্বামী। তাঁদের স্বাগত জানান বিপুলসংখ্যক মানুষ। কিন্তু এরপর বিএনপি প্রার্থীকে সেভাবে প্রচারে নামতে দেখা যায়নি। জানতে চাইলে সালমা আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রচারে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সরকারি দলের কর্মীরা আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। মিছিলের কিংবা উঠান বৈঠকের চেষ্টা করলে সেখানে ঢুকে পড়ে। নেতা–কর্মীদের ভয়ভীতি দেখায়। অবস্থা দেখে আমরা প্রচার সীমিত করে ফেলেছি।’ তিনি বলেন, তাঁরা চান না কর্মীরা মার খাক।

এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘সাবেক সাংসদ শহীদুল আলম তালুকদার এত দুর্নীতি ও অপকর্ম করেছেন যে মানুষ তাঁর প্রতি বীতশ্রদ্ধ। আমরা কাউকেই ভয়ভীতি দেখাচ্ছি না, আর প্রচারেও বাধা দিচ্ছি না।’

 চার ইউনিয়নে বিএনপির, চারটিতে আ.লীগের প্রভাব

আলাপকালে এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন জানান, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতে বিএনপির প্রভাব অনেক বেশি। আর চারটিতে আওয়ামী লীগের। অন্য সাতটিতে দুই দলেরই ভোটার রয়েছে।

নাজিরপুর, কালাইয়া, চন্দ্রদীপ ও বগা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া প্রভাব। সেখানে বিএনপির কর্মী–সমর্থকেরা প্রচারে যেতে পারছেন না। বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগ, এসব ইউনিয়নের বিএনপির নেতা–কর্মীদের নৌকার হয়ে প্রচারে নামতে বাধ্য করা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বললেন, এই চার ইউনিয়নে তাঁর জনপ্রিয়তা এত বেশি যে এখানকার মানুষ প্রতিবার তাঁকে শতভাগ ভোট দেন।

অন্যদিকে ধুলিয়া, কালিশুরী, কেশবপুর ও কনকদিয়া ইউনিয়নে বিএনপির প্রভাব অনেক বেশি। বিএনপি প্রার্থী বলেন, ‘জনগণের ভেতর আমাদের প্রভাব বেশি হলেও এখন ভোটের দিন কী অবস্থা হয় তার ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করে।’

 বিভেদ প্রকট আওয়ামী লীগে

বাউফল আওয়ামী লীগে স্পষ্ট দুটি ভাগ। এক ভাগে আ স ম ফিরোজ। অন্য ভাগে বাউফলের পৌর মেয়র জিয়াউল হক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান। দীর্ঘদিনের দ্বিধাবিভক্তি এই নির্বাচনেও প্রকট।

স্থানীয় লোকজন জানান, এক সপ্তাহ ধরে মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর সঙ্গে না থেকে আলাদাভাবে নিজেদের সমর্থকদের নিয়ে নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি দিয়ে আলাদা পোস্টারও ছাপিয়েছেন।

আলাদাভাবে প্রচার প্রসঙ্গে জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সমন্বয়ের দায়িত্ব তো ফিরোজ সাহেবের। তিনি কোনো উদ্যোগ নেননি। তাই আমরা মাঠে নেমে গেছি।’ তিনি এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘এভাবে মাঠে নেমে তাঁরা আমার ক্ষতি করছেন। মেয়র পৌরসভার গাড়িতে বড় ফেস্টুন নিয়ে প্রচার করছেন। এতে আচরণবিধি ভঙ্গ হচ্ছে। এর দায় তো আমার ওপর পড়বে। আমি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি বিষয়টি।’

এ আসনের অন্য দুই প্রার্থী হলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নজরুল ইসলাম ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মো. শাহাবুদ্দিন আহমেদ। নজরুল ইসলামের প্রচুর পোস্টার দেখা গেলেও শাহাবুদ্দিনের তেমন দেখা যায়নি।

 [প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন শংকর দাস, পটুয়াখালী ও এ বি এম মিজানুর রহমান, বাউফল]