ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ৯ বছরেও শুরু হয়নি সড়কের কাজ

পাহাড়ি রাস্তা ধরে পণ্য নিয়ে বাজারের পথে ব্যাঙছড়ির বাসিন্দারা। দুর্গম এই পথ বাসিন্দাদের একমাত্র যোগাযোগের রাস্তা। সম্প্রতি বান্দরবানের রোয়াংছড়ির ব্যাঙছড়িতে। প্রথম আলো
পাহাড়ি রাস্তা ধরে পণ্য নিয়ে বাজারের পথে ব্যাঙছড়ির বাসিন্দারা। দুর্গম এই পথ বাসিন্দাদের একমাত্র যোগাযোগের রাস্তা। সম্প্রতি বান্দরবানের রোয়াংছড়ির ব্যাঙছড়িতে।  প্রথম আলো

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি-ব্যাঙছড়ি সড়ক নির্মাণের জন্য নয় বছর আগে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হলেও কাজ শুরু হয়নি। সড়কটির নির্মাণকাজের উদ্যোগ নিয়েছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। তবে এখন এই প্রতিষ্ঠানের কেউ জানেন না কখন কাজ শুরু হবে। সড়ক না থাকায় রোয়াংছড়ির ব্যাঙছড়ির বাসিন্দারা একরকম যোগাযোগবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। বাগানে ও জুম খেতে উৎপাদিত কৃষিপণ্য অনেক সময় খেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাজে লাগছে না পর্যটন সম্ভাবনাও।

জানা গেছে, ২০১০ সালে রোয়াংছড়ি-ব্যাঙছড়ি সড়কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। এলজিইডির সড়কটি নির্মাণ করার কথা ছিল। কিন্তু নির্মাণকাজ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যেই থেমে যায়।

বান্দরবান সদর থেকে ২৯ কিলোমিটার ও রোয়াংছড়ি সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে ব্যাঙছড়ির অবস্থান। ব্যাঙছড়ি খাল, খালের মুখে ছোট–বড় চর ও পাহাড় শ্রেণির কারণে এই এলাকার নিসর্গশোভা অপূর্ব। সড়ক যোগাযোগ থাকলে এটি অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে বলে এলাকার লোকজন বলছেন।

সম্প্রতি পাহাড় ডিঙিয়ে পায়ে হেঁটে ব্যাঙছড়ি গিয়ে দেখা যায়, এলাকার নারী-পুরুষ আদা, হলুদ, মরিচসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য মাথায় বহন করে রোয়াংছড়ি বাজারে যাচ্ছেন। বাজার থেকে চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ফিরছেন। দুর্গম খাঁড়া পাহাড়ে কেবল অবৈধ কাঠ পাচারকারীদের দুই-একটি কাঠবোঝাই ট্রাক অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করে। পাচারকারীরা নিজেরাই ঝুঁকিপূর্ণ কাঁচা সড়ক তৈরি করেছে বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। তবে সেখানে আর অন্য কোনো যানবাহন চলে না।

রোয়াংছড়ি বাজার থেকে ফিরছিলেন জিননুন কুং বম নামের এক নারী। তিনি বলেন, বাজারে পণ্য নিয়ে যাতায়াত করতে দুই দিন লেগে যায় তাঁদের। অথচ গাড়ি চলাচল করলে দুই ঘণ্টায় এই পথ পাড়ি দেওয়া যেত।

ওই এলাকায় ব্যাঙছড়িপাড়ায় ১৬০ পরিবারের বসবাস। পাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা ক্যচিংমং মারমা বলেছেন, ব্যাঙছড়ি এলাকায় ২৫-২৬টি পাড়ায় এক হাজার পরিবারের বেশি মারমা, বম, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, খেয়াং জনগোষ্ঠীর লোকজন বসবাস রয়েছে। এখানকার সমতল জমিতে ধান ও চরে আলু, বেগুনসহ শাকসবজি হয়। আর পাহাড়ি জমিতে আদা, হলুদ, ফলদ-বনজ বাগান রয়েছে। তবে সড়কের অভাবে হলে বড় আকারের খামার ও বাগান গড়ে উঠছে না। এ ছাড়া এলাকাটি পর্যটনের জন্যও সম্ভাবনাময়। সড়ক হলে পর্যটকেরা আসতেন। এলাকার লোকজনের আয় বাড়ত।

এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান বলেছেন, তারাছা খালে একটি সেতুসহ প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে রোয়াংছড়ি-ব্যাঙছড়ি সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া যায়নি। আগামী অর্থবছরে বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার প্রকল্পের আওতায় সড়কটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় সাড়ে সাত শত কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়া গেলে প্রথম ধাপেই রোয়াংছড়ি-ব্যাঙছড়ি সড়ক নির্মাণ করা হবে।