ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চু আর নেই। আজ মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টায় রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
রওশন আরা বাচ্চুর মেয়ে তাহমিদা খাতুন প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন।
সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বিকেলে রওশন আরা বাচ্চুর মরদেহ বাংলা একাডেমিতে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানা গেছে।
১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে রওশন আরা বাচ্চু সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সংগঠিত করা ছাড়াও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হলের ছাত্রীদের ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সুসংগঠিত করেন। একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী প্রথম ছাত্রী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন ভাষাসংগ্রামী এই নারী।
ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চু ১৯৩২ সালের ১৭ ডিসেম্বর সিলেটের কুলাউড়ার উছলাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা এ এম আরেফ আলী, মা মনিরুন্নেসা খাতুন। ১৯৪৭ সালে রওশন আরা বাচ্চু ম্যাট্রিক, ১৯৪৯ সালে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে অনার্স পাস করেন। ১৯৬৫ সালে বিএড ও ১৯৭৪ সালে ইতিহাসে এমএ করেন। রওশন আরা বাচ্চু ‘গণতান্ত্রিক প্রগ্রেসিভ ফ্রন্ট’-এ যোগ দিয়ে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন। তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং উইমেন স্টুডেন্টস রেসিডেন্সের সদস্য নির্বাচিত হন। রওশন আরা বাচ্চু সর্বশেষ বিএড কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। অবসর নেন ২০০২ সালে।
রওশন আরা বাচ্চুর পরিবার নানাভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। দাদা আহমদ আলী পড়াশোনা করেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। তিনি ব্রিটিশ সরকারের ইন্সপেক্টর জেনারেল অব রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্বে ছিলেন। চাচা ছিলেন কংগ্রেস পার্টির সদস্য। মা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ না করলেও তাঁর মধ্যে দেশপ্রেমের অভাবনীয় চেতনা ছিল। প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রওশন আরা বাচ্চু বলেছিলেন, ‘আমি আমার জীবনে যা কিছু করতে পেরেছি, তার জন্য মায়ের অবদানই বেশি। যে যুগে আমি পড়াশোনা করেছি, তা যদি আমার মা না দেখতেন, তাহলে হতো না।’
আরও পড়ুন:
আজও জানি না কে ছিল সেই উপকারী মানুষ