‘সবকিছুই স্বপ্ন মনে হচ্ছে। নিজের গ্রামে ফিরে আসা তো দূরের কথা, ভাবিনি মা-ভাইবোন আর গ্রামবাসীদের সঙ্গে আর কোনোদিন দেখা হবে। প্রায় দেড় বছর পর গ্রামে ফেরা। ভীষণ ভালো লাগছে।’
কথাগুলো রেশমার। সাভারের রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৭তম দিনে উদ্ধার করা হয় তাঁকে। গত বৃহস্পতিবার বাড়ি ফেরেন রেশমা। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার কশিগাড়ী গ্রামে বড় বোন ফাতেমার বাসায় আছেন রেশমা। মা জোবেদাও আছেন সেখানে।
রেশমা জানান, পরিবার, স্বজন ও গ্রামের মানুষের দোয়া চাইতে সেখানে গেছেন তিনি। ভালো লাগলে কয়েক দিন থাকবেন। তিনি বলেন, ওয়েস্টিন হোটেলের মহাব্যবস্থাপক আজিম শাহ তাঁর নিজের গাড়িতে করে রেশমাকে ঘোড়াঘাট পৌঁছে দেন। সঙ্গে ছিলেন ওয়েস্টিনের প্রধান নির্বাহী হেলেনা। যোগদানের আগে রেশমাকে কাজে দক্ষ করে গড়ে তুলছেন তিনি। তিনিই এখন রেশমার শিক্ষকের মতো।
রেশমা বলেন, তাঁর নতুন কর্মস্থল ভীষণ ভালো। সবাই অনেক আদর করেন রেশমাকে। আপাতত তাঁকে মাসে ৩৫ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হচ্ছে। খুব ভালো আছেন বলে জানান রেশমা।
রেশমার মা জোবেদা খাতুন বলেন, ‘মোক খউব শান্ত লাগছে, বাবা। আল্লাহ হামার ছাওয়ালটাক ফিরাই দিছে। হাজার শুকুর আল্লাহরঠে। আর যারা মোর ছাওয়ালক উদ্ধার করিছে ওমহারঠে।’
রেশমার বড় ভাবি শম্পা বেগম বলেন, ওয়েস্টিন হোটেলের কর্মকর্তারা পরিবারের সদস্যদের হুঁশিয়ার করে গেছেন, রেশমা এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন। বেশি কথা বলা তাঁর নিষেধ। কেউ যেন তাঁর অতীত, রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে কীভাবে ছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন না করে। না হলে যেকোনো সময় অপ্রকৃতিস্থ হতে পারেন রেশমা।
আজ রেশমার বাড়িতে রান্না হয়েছে তাঁর পছন্দের সব খাবার। গরুর মাংস, চালের আটার রুটি, পোলাও, মুরগির ঝাল মাংস। রয়েছে আম-কাঁঠাল।
রেশমাকে দেখতে মানুষের ভিড়
গতকাল সকাল থেকে রেশমাদের বাড়িতে ভিড় জমছে মানুষের। স্থানীয় রানীগঞ্জ দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে একসঙ্গে ১৫ জন মেয়ে গেছে রেশমাদের বাড়িতে। গাইবান্ধা জেলা সদর থেকে গেছেন ব্যবসায়ী মাহবুব উল আলম। ঘোড়াঘাটের ঋষিঘাট এলাকার বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দোকানদার মো. ইউনুছ আলী বলেন, ‘হামার এলাকার মেয়ে। এত বড় একটা ঘটনা ঘটাইছে, সারা বিশ্বের মানুষ এখন ওক চিনে। রেশমা হামার গর্ব।’
ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, অনেক মানুষ আসছে। কাউকে নিষেধ করা যাচ্ছে না। পুলিশ রেশমার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে বলে জানান তিনি।