উৎসব শুরু হওয়ার কথা সকাল সোয়া ৯টায়। এর আগেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লার খুদে গণিতবিদদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে প্রাঙ্গণ। প্রতিযোগিতায় বসার আগে সমাবেশ হয়। সেখানে গণিতকে ভালোবেসে জয় করার অঙ্গীকার করে শিক্ষার্থীরা।
গতকাল শুক্রবার কুমিল্লা নগরের নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে কুমিল্লা অঞ্চলের গণিত উৎসব হয়। এতে বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর ছয়টি জেলার ১৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ৯৭২ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির আয়োজনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় এ উৎসব হয়। এতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সহযোগিতা করেন বন্ধুসভার সদস্যরা। বরাবরের মতো এবারও গণিত উৎসবের স্লোগান ছিল-গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো।
দিনব্যাপী উৎসবের মধ্যে ছিল উদ্বোধনী পর্ব, মূল আয়োজন গণিত অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতা, প্রশ্নোত্তর পর্ব, সাংস্কৃতিক পর্ব, সমাপনী পর্ব ও পুরস্কার বিতরণ। সকাল সাড়ে ৯টায় উদ্বোধনী পর্বে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। এ সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকসানা ফেরদৌস মজুমদার। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির পতাকা উত্তোলন করেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ আবু জাফর খান। এ সময় বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধান শিক্ষক রোকসানা ফেরদৌস মজুমদার। উদ্বোধনী পর্বে আরও শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কুমিল্লা শাখার ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হুমায়ুন।
উদ্বোধনী পর্বে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া বলেন, এই দিনটি মহোৎসবের দিন। গণিত থেকে মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরি হয়। শিক্ষার্থীদের গণিতভীতি দূর করতে হবে।
উদ্বোধনী পর্বের পর সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে মূল আয়োজন গণিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রাইমারি, জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। বেলা সোয়া ১১টায় উৎসবের সংগীতের মধ্য দিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়। এতে খুদে গণিতবিদদের জটিল সব প্রশ্নের উত্তর দেন ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ আহমেদ, গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মুনির আহাম্মদ, রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজু আহাম্মদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের কুমিল্লা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক ও গণিতের সহকারী অধ্যাপক আবুল খায়ের মুন্সী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জিল্লুর রহমান এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পার্থ চক্রবর্তী।
বেলা ৩টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার সাহা, শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান কুন্ডু গোপী দাস, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, রোটারি ক্লাবের ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নারীনেত্রী দিলনাশি মোহসেন, জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার, নবাব ফয়জুন্নেছা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকসানা ফেরদৌস মজুমদার, কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নার্গিস আক্তার, ভিক্টোরিয়া কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিলুফার সুলতানা, প্রথম আলোর কুমিল্লা বন্ধুসভার উপদেষ্টা রোকেয়া বেগম ও মাহমুদা আক্তার, কুমিল্লা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন, প্রথম আলোর ফেনী প্রতিনিধি আবু তাহের ও কুমিল্লা বন্ধুসভার সভাপতি সাদেক আহমেদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর কুমিল্লা কার্যালয়ের নিজস্ব প্রতিবেদক গাজীউল হক।
অধ্যক্ষ রতন কুমার সাহা বলেন, গণিত না জানলে বিজ্ঞানে ভালো করা যায় না। তাই বিজ্ঞান শিক্ষাকে বেগবান করতে হলে গণিতে ভালো করতে হবে।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে ২৮ জন, জুনিয়র ক্যাটাগরিতে ৩৬ জন, সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে ২০ জন ও হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে ১৫ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কার হিসেবে মেডেল, সনদ ও টি-শার্ট দেওয়া হয়। নবাব ফয়জুন্নেছা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকসানা ফেরদৌস মজুমদারকে শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে ক্রেস্ট তুলে দেন ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার সাহা। সবশেষে গণিত জয়ের গান দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
কুমিল্লা গণিত উৎসব উৎসর্গ পর্ব
কুমিল্লা অঞ্চলের গণিত উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আন্দোলনের উদ্যোক্তাদের অন্যতম ব্যক্তিত্ব কানাডাপ্রবাসী কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধা একুশে পদকপ্রাপ্ত রফিকুল ইসলামকে।