১৯৯৬ সালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গঙ্গা পানিচুক্তি প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী ভারতের প্রতিবছর গঙ্গা দিয়ে বাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো বছরে মাত্র দেড় হাজার কিউসেক পানি পেয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ভারত কখনই বাংলাদেশকে গঙ্গা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দেয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটার ভবনের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে আজ শনিবার বিকেলে এক বক্তৃতানুষ্ঠানে আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন। ‘নদী, পরিবেশ, আইন ও রাষ্ট্র’ শীর্ষক অপ্রকাশিত পিএইচডি অভিসন্দর্ভ-৫ এই বক্তৃতার আয়োজন করে জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘যেখানে আইনের সুশাসন থাকবে না, যখন সংকীর্ণ ব্যাখ্যা দেওয়া হবে, যখন বলা হবে গঙ্গাচুক্তি একটা অসাধারণ অ্যাচিভমেন্ট, তখন আপনাকে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে বলতে হবে এটা একটা ঘোড়ার ডিমের অ্যাচিভমেন্ট।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি-আওয়ামী লীগ কিংবা জাতীয় পার্টি, যে আমলই হোক, এমন একটা অদ্ভুত ও প্রতিকূল সময়ে আমরা বসবাস করছি। চুক্তি অনুযায়ী ভারতের প্রতিবছর গঙ্গা দিয়ে বাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো বছরে মাত্র দেড় হাজার কিউসেক পানি পেয়েছে বাংলাদেশ।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। স্বাগত বক্তব্য দেন জ্ঞান তাপস আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আহরার আহমদ।
ভারত কখনই বাংলাদেশকে গঙ্গা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বা তথ্য দেয়নি মন্তব্য করে আসিফ নজরুল বলেন, গঙ্গা চুক্তির মাধ্যমে ভারত উত্তর প্রদেশ, বিহারে, পশ্চিমবঙ্গের প্রবাহ থেকে কী পরিমাণ পানি ডাইভার্ট করছে বা কী পরিমাণ প্রকল্প আছে তা জানাবে না, কোনো তথ্য দেবে না, অসংখ্য প্রকল্প আছে সেখানে। শুধু জানাবে সীমান্তগুলো হিসাব, সমান্তরাল ভাগের কথা বলবে। তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে আমাদের বঞ্চিত করছে ভারত। সীমান্তে মানে লেজের অংশে উদ্বৃত্ত পানির আধা ভাগ দেবে ভারত। এত বুদ্ধিবৃত্তিক অসততা! এবং সেটাও আমরা পাচ্ছি না। গত ৫ থেকে ৭ বছর যাবৎ ভারত গঙ্গা দিয়ে আমাদের কতটুকু পানি দিচ্ছে তার কোনো প্রতিবেদন গণমাধ্যমে দেখা যায় না। যৌথ নদী কমিশনে গেলে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তথ্য চাইতে গেলে আবার বিপদে পড়তে পারেন।’
আসিফ নজরুল মনে করেন, চাওয়ার মতো করে চাইলে ভারত অবশ্যই বাংলাদেশকে পানি দিতে বাধ্য। সমস্যা বাংলাদেশেরও আছে। বাংলাদেশের উচিত নিয়মিত আন্তর্জাতিক ফোরামে পানির হিস্যা চাওয়া। বিএনপি-আওয়ামী লীগ দল-মত-নির্বিশেষে এক হয়ে পানির দাবি করতে হবে। তিনি বলেন, ‘শাসক যেই দলই থাকুক, সে যদি একটা কনভেনশন ডেকে বলে, এই ইস্যুগুলোতে আমরা এক থাকব, তাহলে অবশ্যই ভারত আমাদের দাবি মেনে নেবে। ভারতেরও প্রচুর পানির সংকট আছে। কিন্তু সমস্যাটা আমাদের, ভারতের না। আমরাও চাইলে গঙ্গায় ড্যাম বা ব্যারেজ দিতে পারি, বৃষ্টির পানি জমিয়ে কাজে লাগাতে পারি। কিন্তু আমরা বড় প্রকল্প করছি, ক্ষমতা এখন তো আছেই, এই ড্যাম করলে আমাদের এত মুখাপেক্ষী থাকতে হতো না।’
বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নদীগুলো রক্ষায় বাংলাদেশেরও দায়িত্ব আছে উল্লেখ করে বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা নদীকে তো আমরা নিজেরাই মেরে ফেলেছি। এর জন্য তো অন্য দেশ দায়ী না। তাই আমাদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে। আমরা যদি স্পষ্ট উচ্চারণে পানির দাবি তুলে ধরতে পারতাম তাহলে সমস্যা হতো না।’
স্বাগত বক্তব্য দেন জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আহরার আহমদ।
জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। পাণ্ডিত্যে ও জ্ঞান অন্বেষণে সারা জীবন নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিয়ে, মিশে এ দেশের বহু বিদ্যার্থী নিজেদের মানসভুবনকে করেছেন সমৃদ্ধ। সারা জীবন তিনি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ দেখতে চেয়েছিলেন। তাঁকে স্মরণ করতেই জ্ঞান তাপস আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন।