ভাঙা সাঁকোই পারাপারের ভরসা

সেতু না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে নদী পার হচ্ছেন মানুষ। খারুভাজ নদীর ওপর খারুয়াবাদ ঘাট, তারাগঞ্জ, রংপুর, সম্প্রতি তোলা
ছবি: প্রথম আলো

সাঁকোটির বিভিন্ন অংশের বাঁশের বাতা ও কাঠের খুঁটি ভেঙে গেছে। পরে আবারও বাঁশের খুঁটি লাগানো হলেও পানির স্রোতে মাটি সরে গিয়ে নড়বড়ে হয়ে যায়। লোকজন পার হওয়ার সময় সাঁকোটি বিপজ্জনকভাবে দোলে।

যাতায়াতের বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় ১০টি গ্রামের মানুষকে ওই পথটুকু পার হতে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোটি ব্যবহার করতে হয়।

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার খারুভাজ নদের খারুয়াবাদ ঘাটে সেতু না থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ১০ গ্রামের ১৫ হাজারের বেশি মানুষ। তারা এখন ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ওই খেয়াঘাটের চারপাশে ১০টি গ্রাম আছে। এর মধ্যে খারুভাজ, নদীরপার, বারোঘড়িয়া, মমিনপুর, শান্তিপাড়া, জানপুর, সৈয়দপুর, নেকিরহাটসহ ১০টি গ্রামের ১৫ হাজার বেশি মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ ওই বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদ পারাপার হতে হচ্ছে।

শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, ওই খেয়াঘাটে নদীর ওপর বাঁশের সাঁকোটি নড়বড়ে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সাঁকো নিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ ওই সাঁকোর ওপর দিয়ে সাইকেল ঘাড়ে নিয়ে পারাপর হচ্ছেন।

সাঁকো পারাপারের সময় কথা হয়, জানপুর গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিনের (৫০) সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘ভোট আসুক, তখন দেখমেন কত নেতা আসি এলা এটে কোনা পুল বানে দিবার চাইবে। এমন ভাইলে কইবে নদীত মনে হয় আইত (রাত) পোহাইলে পুল দেখির পামো। কিন্তু ভোট গেইলে আর কারও দেখা পাওয়া যায় না। এটে আর পুলও হয় না। তোমাক এগলা কয়া লাভ কী? এটে কি তোমরা পুল বানে দিবার পাইমেন।’

সাইকেল ঘাড়ে নিয়ে সেতু পার হচ্ছেন মমিনপুর গ্রামের ইকরামুল হক (৩৩)। তিনি বলেন, ‘ভাইজান, হামরা যেমন কষ্ট করি ভাঙা সাঁকো দিয়া চলাচল করুছি। হামার বাপ-দাদারাও এমতোন কষ্ট করি মরি গেইছে। কিন্তু এটে কোনো তাও কায়ও সেতু হওছে না। সেতু না থাকায় এদি ভ্যান-মোটরগাড়ি চলে না। সাইকোলও ঘাড়োত করি পার করবার নাগে।’

ওই খেয়াঘাটের পশ্চিম পারে বোরো ধান কাটতে ব্যস্ত জানপুর গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন (৪৫)। তিনি এই দেখে খেত থেকে আলে উঠে এসে বলতে থাকেন, ‘বাবা মিছা কথা কবার নেও। এইটে এনা পুল বানার তকনে পাঁচবার এমপি ভোটোত দুইবার নৌকাত, দুইবার নাঙ্গলোত আর একবার ধানের শীষোত ভোট দিছনু। কিন্তু পুল হয় নাই। এটে পুল না হওয়ায় হামার খুব কষ্ট। ধান, চাউল, সবজির ভালো দাম পাওছি না। যাওয়া আইসা করতেও কষ্ট হওছে।’

স্থানীয় হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, সেতুর অভাবে ১৫টি গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। কৃষকেরা ধান, পাট, আলু সবজির ভালো দাম পাচ্ছেন না। এখানে সেতু নির্মাণ করলে গ্রামের মানুষের আর্থিক উন্নয়ন ঘটবে।

উপজেলা প্রকৌশলী আহাম্মেদ হায়দার জামান বলেন, ওই স্থানে সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে সেতু নির্মাণ করে দেওয়া হবে।