বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

ভর্তুকি মূল্যে পণ্য পাবে কোটি পরিবার

যেসব পরিবার পণ্য পাবে

  • নগদ সহায়তা দেওয়ার আগের তালিকা থেকে ৩০ লাখ।

  • স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের তৈরি নতুন ৫৭ লাখ ১০ হাজার।

  • ঢাকা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১২ লাখ ৯০ হাজার।

টিসিবির পণ্য কিনতে ভিড়। গত বুধবার হাতিরপুল এলাকায়

পবিত্র রমজান উপলক্ষে দেশের এক কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি করবে সরকারি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। দুবার করে এ পণ্য বিক্রি করা হবে। এ জন্য ফ্যামিলি কার্ড করা হয়েছে। আর পণ্যের মধ্যে রয়েছে সয়াবিন তেল, চিনি, পেঁয়াজ, মসুর ডাল ও ছোলা।

আজ রোববার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার স্টেশন রোড ও পোস্তগোলা রোডে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ।

ভর্তুকি মূল্যে সয়াবিন, মসুর ডাল ও চিনি বিক্রি শুরু আজ। পরে বিক্রি করা হবে পেঁয়াজ ও ছোলা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ফ্যামিলি কার্ড ইতিমধ্যে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পণ্য বিক্রির জন্য দুটি ধাপ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে আজ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে পাঁচ ধরনের পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি। আজ বিক্রি করা হবে সয়াবিন তেল, ডাল ও চিনি। পরে পেঁয়াজ যুক্ত করা হবে। এরপর আগামী ৩ এপ্রিল শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপের বিক্রি কার্যক্রম। এ ধাপেও সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে পারবেন তাঁরা। এ ধাপের বিক্রি কবে শেষ হবে, তা গতকাল শনিবার পর্যন্ত ঠিক করা হয়নি।

প্রথম ধাপে এক কোটি পরিবারের কাছে ১১০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করা হবে দুই লিটার করে সয়াবিন তেল। এ ছাড়া ৫৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি করে চিনি, ৩০ টাকা কেজি দরে পাঁচ কেজি করে পেঁয়াজ এবং ৬৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি করে মসুর ডাল বিক্রি করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে এসব পণ্যের সঙ্গে যুক্ত হবে প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে দুই কেজি করে ছোলা।

টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, আজ যে কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, তা বাস্তবায়ন করতে ৮ মার্চ থেকেই জেলায় জেলায় পণ্য পাঠানো শুরু করেছে টিসিবি। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি জেলায় খাদ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও নির্ধারিত গুদামে টিসিবির পণ্য রাখা হয়েছে।

‘এটি সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। নিম্ন আয়ের মানুষের এতে কিছুটা হলেও উপকার হবে। বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম, এই উদ্যোগ বাজারে প্রভাব ফেলবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
গোলাম রহমান, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি

এ ছাড়া পণ্য সুষ্ঠুভাবে বিক্রি করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তাকে নিয়োগ করেছে জেলা প্রশাসন। কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়েছে এবং তদারকির জন্য ট্যাগ অফিসারও নিয়োগ করা হয়েছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। নিম্ন আয়ের মানুষের এতে কিছুটা হলেও উপকার হবে। বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম, এই উদ্যোগ বাজারে প্রভাব ফেলবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

এক কোটি পরিবারের হিসাবটি যে রকম

করোনাকালে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৫০ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষকে নগদ এককালীন আড়াই হাজার করে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তালিকাটি ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় সবার কাছে সরকার টাকা পৌঁছাতে পারেনি। এ নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় জনসংখ্যা ও দারিদ্র্য সূচক ব্যবহার করে ওই ৫০ লাখ থেকে শেষ পর্যন্ত ৩৮ লাখ ৫০ হাজার জনের একটি তথ্যভান্ডার করেছে সরকার এবং এ থেকে ৩০ লাখ পরিবারের কাছে পণ্য বিক্রি করা হবে। এর বাইরে সারা দেশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন মিলে ৫৭ লাখ ১০ হাজার উপকারভোগী পরিবার নির্ধারণ করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় বলছে, সময়ের অভাবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ১২ লাখ এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনে ৯০ হাজার উপকারভোগী নির্ধারিত হয়নি। এই তিন সিটি করপোরেশনের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে পণ্য কিনতে হবে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থেকেই।

বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ গতকাল প্রথম আলোকে জানান, ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ পণ্য তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আগামী পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে বাকি পণ্যও পৌঁছে যাবে।

নগদ সহায়তার তালিকা তৈরিতে জালিয়াতি হয়েছিল, নতুন ৫৭ লাখ পরিবারের তালিকাও যেহেতু একই প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে, এর নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে আস্থা রাখা যায় কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘কারও না কারও প্রতি আমাদের আস্থা রাখতেই হবে। একটি কমিটির মাধ্যমে এটা করা হয়েছে।’