বয়সের ভারে ন্যুব্জ আবিয়া বেওয়া। বার্ধক্যজনিত কারণে নানা রোগে-শোকে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন তিনি। বয়স হয়েছে ৯০ বছর। চিকিৎসা দূরের কথা, তিন বেলা খাবার জোটানোও তাঁর জন্য কষ্টকর। জীবনের শেষ সময়ে একটু সচ্ছলতার আশায় বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য ধরনা দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে। আশ্বাস মিললেও এখনো জোটেনি কোনো কার্ড।
আবিয়া বেওয়ার বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের গনেশপুর গ্রামে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর জন্মতারিখ ১৯২৯ সালের ২৭ জানুয়ারি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বয়স্ক ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর বয়স সর্বনিম্ন¤৬২, আর পুরুষের বয়স সর্বনিম্ন ৬৫ বছর। সে অনুযায়ী আবিয়া বেওয়া বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য হলেও এত দিনেও কেউ তাঁর সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি।
এলাকাবাসী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবিয়া বেওয়ার স্বামী অছির উদ্দিন মারা গেছেন প্রায় ২০ বছর আগে। সহায়-সম্পদ বলতে একখণ্ড বাড়িভিটা ছাড়া তাঁর তেমন কিছু নেই। সংসারজীবনে তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মা হন আবিয়া। আবিয়ার বড় ছেলে এনছের আলী মারা গেছেন প্রায় ১২ বছর আগে। এখন তিনি এনছেরের বড় ছেলে জুয়েল হোসেনের বাড়িতে থাকেন। কালাম ও আরেক ভাই বাবু খেতমজুর ও শ্রমজীবী।
আবিয়া বেওয়া বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর হামি বড় বেটার (ছেলে) কাছত থ্যাকিত। বড় বেটা মারা যাওয়ার পর নাতি (বড় ছেলের সন্তান) জুয়েলের বাড়িত থ্যাকি। হামার অন্য ছাওয়াল-পোয়ালরা (ছেলেমেয়েরা) কেউ হামাক দ্যাখে না। নাতি জুয়েল বউ-ছাওয়াল নিয়ে কোনোরকম কষ্ট করে চলে। তার ওপর হামাক পালতে ওর ম্যালা কষ্ট হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর খুব কষ্টত আছি। অসুস্থ হলে ঠিকমতো ওষুধ কিনে খ্যাতে পারি না। একটু খ্যায়ে-পড়ে চলার জন্য ম্যালা দিন ধরে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য কত্তবার গেছি, হিসাব নাই। ব্যাবাক খালি কথা দিছে, কেউ কথা থুইনি (রাখেনি)। আর কত বয়স হলে হামাক কার্ড দিবে?’
আবিয়ার নাতি জুয়েল বলেন, ‘উপার্জনের টাকায় না চলায় ধ্যারদেনা করে খুব কষ্টে চলতেছি। তার ওপর দাদির দেখাশোনা করতে হয়। এর মধ্যে অসুস্থ দাদিকে ওষুধ খাওয়ানো লাগে। বয়স হয়ে যাওয়ায় দাদি প্রায় সব সময়ই অসুস্থ থাকে। বয়স্ক ভাতার কার্ডটা হলে খুব উপকার হতো।’
এ ব্যাপারে গনেশপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হানিফ উদ্দিন মন্ডল বলেন, ‘এত বয়সী এক বিধবা নারীর বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়নি, এটা আমার জানা ছিল না। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি আমার কাছে এ ব্যাপারে আসেননি। তবে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সঙ্গে কথা বলে যৌক্তিকতা থাকলে আমি তাঁর একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেব।’
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হালিম বলেন, ওই বিধবা মান্দা উপজেলা সমাজসেবা অফিসে আবেদন করলে তদন্ত সাপেক্ষে তাঁর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বয়স্ক ভাতা পাওয়ার মতো উপযুক্ত হলে তাঁকে অবশ্যই কার্ড করে দেওয়া হবে।