মহাসড়ক বানানো হয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ খরচে, কিন্তু সেখানে প্রায় অর্ধকোটি বেকারের জন্য জায়গা রাখার প্রয়োজন মনে করা হয়নি।
পবিত্র রমজান মাসে সাভারে এক অটোরিকশাচালক আত্মহত্যা করেছিলেন। তাঁর নাম নাজমুল কাজী। তাঁর অটোরিকশাটি পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে যায় আর তিন হাজার টাকা জরিমানা করে। এরপরই গলায় ফাঁস দেন নাজমুল। নাজমুল কে ছিলেন? অটোরিকশা চালাতে গেলেন কেন? তা–ও আবার ব্যাটারিচালিত রিকশা, যেটার ঠিকঠাক অনুমোদন নেই। নাজমুলের মতো আরও ৪০ থেকে ৫০ লাখ বেকার তরুণ আছেন। তাঁরা কেন শখ করে এসব অটোরিকশা চালাতে আসেন?
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে হাইকোর্ট থেকে রায় দেওয়া হয়েছিল, ইজিবাইক অবৈধ। অপসারণ করতে হবে। হাইকোর্টে এই রিট করলেন কে? অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, রিট করেছেন একটি নতুন ইজিবাইক কোম্পানির সভাপতি।
এ কোম্পানি আবার আগামী জুন মাসে ৩০ হাজার নতুন ইজিবাইক নামাবে রাস্তায়। কোম্পানির ইজিবাইকের দাম ছয় লাখ টাকা, আর স্থানীয় মেকানিকের তৈরি ইজিবাইক মাত্র দেড় লাখ টাকায় পাওয়া যায়। বোঝাই যাচ্ছে, নতুন কোম্পানির বিক্রিবাট্টা নিশ্চিত করতে হবে। গরিবের ইজিবাইক অপসারণ তার প্রথম ধাপ।
বাংলাদেশে ইজিবাইকের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। অর্ধেক দেশে তৈরি হলে বাকি অর্ধেক কোত্থেকে আসে? শুধু গাজীপুরেই তিন সড়কের মোড় থেকে টাঁকশাল পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত শোরুম আছে। এমনকি সেনাকল্যাণ সংস্থার অধীন ‘ট্রাস্ট’-এরই একাধিক ইজিবাইকের শোরুম আছে এই রাস্তায়। আমদানিকারকদের পার্টস এবং সম্পূর্ণ ‘বডি’ আমদানি করার অনুমোদন আছে। এত দিন ধরে আমদানি হয়েছে, বিক্রিও হয়েছে, অথচ গরিব তরুণেরা সেই একই জিনিস নিয়ে রাস্তায় নামলেই ধরপাকড়, জরিমানা, ডান্ডার বাড়ি?
যাহোক, এ বছর এপ্রিলে আদালত আরেকটি রায় দিয়েছেন। রায়ে বলা হয়েছে, আমদানি বৈধ, কিন্তু ইজিবাইক মহাসড়কে চলতে পারবে না, চলতে পারবে শহরের মধ্যে, অলিগলিতে। এই পাল্টা রিট করলেন কে? এই রিট করলেন আমদানিকারক। তাঁরা হাজার হাজার পার্টস আর বডি কিনে ফেলেছেন, তাঁদের শোরুম আছে, খরচাপাতি আছে। বিক্রি বাড়ানোর পরিকল্পনাও আছে।
তার মানে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল? নতুন ব্যবসায়ীর রিটে স্থানীয় ইজিবাইক অবৈধ। আর পুরান ব্যবসায়ীর রিটে আমদানি করা ইজিবাইক বৈধ। এত সব বৈধ-অবৈধর আইনি মারপ্যাঁচের মধ্যে পড়ে ৪০ লাখ ইজিবাইকচালকের কী বিশ্রী অপমান। খেটে–খাওয়া তরুণকে চোরের মতো রাস্তায় গাড়ি বের করতে হয়। কিস্তির টাকায় কেনা গাড়ি মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে ছাড়াতে হয়।
জেলা শহরগুলোর জনসংখ্যা বেড়েছে, স্কুল-কলেজ, দোকানপাটের সংখ্যা বেড়েছে, গণপরিবহন সীমিত, তাহলে ইজিবাইকের চাহিদা বাড়বে না কেন? দেশে তো আর ঘরে ঘরে টয়োটার গাড়ি নেই।
চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়েছে সত্যি। ২ হাজার ৫০০ টাকার দৈনিক রোজগার ১ হাজার ৫০০ টাকায় নেমে এসেছে। কিন্তু গাজীপুরের ইজিবাইকচালকেরা জানান, মাসে এখনো ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন তাঁরা। ইজিবাইকের সংখ্যা আরও বেড়ে গেলে উপায় কী—এ প্রশ্নের উত্তরে নিজেরাই সমাধান দিলেন। গাড়ির প্লেট ভাগ করে দেওয়া হবে। এক দিন লাল প্লেট বের হবে, পরের দিন নীল প্লেট। নীলের দিনে লাল বের হবে না, তাতে যানজট কম হবে, আবার নীলের আয়ও দ্বিগুণ হবে। চালকেরাই জানান, ময়মনসিংহে এই পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর হয়েছে।
এখন গণমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী, ইজিবাইকের সংখ্যা কি অতিরিক্ত বেড়ে গেছে? চাহিদার চেয়ে গাড়ি বেশি? তাহলে রিট করা কোম্পানিটি ৩০ হাজার ইজিবাইক নামানোর ‘বিজনেস প্ল্যান’ করে কীভাবে? গাজীপুরে কোটি টাকার কারখানা খুলেছে, সংবাদপত্রে লাখ টাকার বিজ্ঞাপনও ছাপাচ্ছে, বাজার না বুঝেই?
নগরবিদেরা বরাবরই বলে আসছেন, একটি আধুনিক নগরীর মোট আয়তনের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকা দরকার। অথচ ঢাকায় অলিগলিসহ রাস্তা মাত্র ৭ শতাংশ! জেলা শহরগুলোয় রাস্তা মোট আয়তনের মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ! যানজট কমাতে জেলা শহরগুলোয় প্রয়োজন পর্যাপ্ত বাইপাস সড়ক, পর্যাপ্ত অলিগলি, পর্যাপ্ত প্যারালাল রোড ও লিংক রোড। জেলা শহরগুলোর ভেতরে-ভেতরে পর্যাপ্ত রাস্তা না থাকার কারণে মহাসড়কে উঠেই গন্তব্যে পৌঁছাতে হয় গাড়িকে। এখন শহরের আয়তনের তুলনায় প্রয়োজনীয় রাস্তা অর্ধেকের কম থাকলে যানজট হবে না তো কি?
বলা হচ্ছে, ইজিবাইকের দুর্বল কাঠামোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। ‘বডির’ তুলনায় মোটরের ওজন ভারী হওয়ায় গতি নিয়ন্ত্রণ করা দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। প্রকৌশলীরা বলছেন, এটি বেশ কয়েক বছর আগে সমস্যা ছিল। কিন্তু স্থানীয়ভাবে বহু পরীক্ষামূলক চর্চার মধ্য দিয়ে এ কাঠামো শক্ত হচ্ছে। যেমন দেশের স্থানীয় মেকানিকেরা যে বোরাক তৈরি করছেন, তার কাঠামো তুলনামূলকভাবে মজবুত। প্রকৌশলীদের মতে, কিছু জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে, যেমন মোটরের সঙ্গে স্পিড রেগুলেটর (গতিনিয়ন্ত্রক) বসানো, বডির ওজন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং পেছনের কাঠামো নিয়ে কাজ করা। গাজীপুরের স্থানীয় মেকানিকেরা জানান, গাড়ি সারানোর সময় তাঁরা নিজেরাই নতুন করে চিন্তা করেন। আগের চেয়ে উন্নত করার চেষ্টা করেন। এ ছাড়া দেশীয় যেসব থ্রি-হুইলার কোম্পানি বিআরটিএর অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর কাঠামোকে ‘মডেল’ কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করায় উৎসাহ দিতে সরকারি উদ্যোগ থাকবে না কেন? মোটকথা, কোনোরকমের ভর্তুকি ছাড়াই স্থানীয় দক্ষতায় যে শিল্প গড়ে উঠেছে, তার নিরাপদ বিকাশের দায়িত্ব রাষ্ট্র কেন নেবে না? আমেরিকা, ইউরোপ, চীন, ভারত বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো তাদের স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ও গবেষণায় বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিচ্ছে না?
বলা হয়, মহাসড়কে দ্রুতগতির বাস-ট্রাকের সঙ্গে স্বল্পগতির ইজিবাইক একসঙ্গে চলা ঝুঁকিপূর্ণ। খুবই সত্যি কথা। এ দেশে গরুর গাড়ি ও দূরপাল্লার বাস এক সড়কেই চলে এবং এটি আমাদের সড়কব্যবস্থার একটি পুরোনো সমস্যা। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান তো বিশেষজ্ঞরাই বাতলে দিয়েছেন। প্রতিটি মহাসড়কের পাশে একটি করে সার্ভিস সড়ক সংযুক্ত করা এবং সার্ভিস সড়কগুলোকে মূল সড়কের তুলনায় নিচু রাখা।
এ রকম বহু এলাকা আছে, যেখানে কৃষিপণ্য পরিবহন, রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া বা মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার একমাত্র ভরসা ভ্যান আর ইজিবাইক এবং এই বাহনগুলোকে একপর্যায়ে মহাসড়কে উঠতেই হয়। তাহলে এত বছরেও মহাসড়কগুলোয় সার্ভিস রোড নেই কেন? যোগাযোগ অবকাঠামোতে এই বছরের বরাদ্দ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। ভারত ও চীনের দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ খরচে মহাসড়ক বানানো যায়, বিশ্বের সর্বোচ্চ খরচে মাওয়া রুট তৈরি হয়, অথচ বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের প্রেক্ষাপটে অতিপ্রয়োজনীয় সার্ভিস সড়কগুলো তৈরি করা যায় না! গ্রামীণ অর্থনীতির চলাচলের পথকে দুর্ঘটনামুক্ত রাখতে ন্যূনতম কোনো দায় নেই রাষ্ট্রের?
কোনো সন্দেহ নেই যে লেড অ্যাসিডের ব্যাটারি পরিবেশবান্ধব নয়। এখন যদি প্রশ্ন করি, এ দেশে ঠিক কোন জিনিসটা পরিবেশবান্ধব? রামপাল, মাতারবাড়ী আর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা খুব পরিবেশবান্ধব? বড়লোকের এসি আর মধ্যবিত্তের ফ্রিজের রেফ্রিজারেটর পরিবেশবান্ধব? তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ধ্বংস করা গার্মেন্টস খুব পরিবেশবান্ধব? এখন কি গার্মেন্টসওয়ালা আর এসিওয়ালাদের বিরুদ্ধে রিট করবেন?
পৃথিবীর সবচেয়ে বায়ুদূষণের দেশে, প্লাস্টিকদূষণের দেশে আর কারও কোনো দায়দায়িত্ব নেই, খালি রিকশাওয়ালার ব্যাটারি পরিবেশবান্ধব হওয়াই লাগবে!
এ দেশে তড়িঘড়ি করে হাজার কোটি টাকার পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো ভয়ংকর জটিল চুক্তিও হয়ে যায়, অথচ সামান্য একটা ব্যাটারি সাইকেল নীতিমালা হয় না। লেড অ্যাসিড থেকে ধীরে ধীরে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে একসময় যেতেই হবে, কিন্তু সেই রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকারের কোনো পরিকল্পনা থাকবে না? ভর্তুকি থাকবে না? পরিবেশ রক্ষার ঝান্ডা ওড়াতে হবে খালি রিকশাওয়ালা-অটোওয়ালাদের?
সস্তার বাহন হিসেবেই নানা ডিজাইনের, নানা রঙের ইজিবাইক ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। একসময় শুধু চীন থেকে আমদানি হতো। চীনেরটা কপি করতে করতে এখন গ্রামগঞ্জের মিস্ত্রি-মেকানিকরাও এ বাহন তৈরিতে পারদর্শী হয়ে উঠেছেন। একেকটি গাড়ি তৈরিতে একজন মোটর মেকানিক বা একজন কাঠের মিস্ত্রির কত পরিশ্রম, কত চিন্তা। বোরাকের হুড, সিট, বডি, বাম্পার, চাকা, ব্যাটারি—সবই দেশে তৈরি হচ্ছে। চার্জার, পিকআপ, স্টিয়ারিং, বাতি, গ্লাস, হুইপার, ব্রেক শু, এলইডি, পেডেল, চেইন, বেল—এগুলোও তৈরি হচ্ছে দেশে। চাকার ফ্রেম, টিউব, টায়ার, এগুলোও।
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই এখন শত শত পার্টসের দোকান, ইজিবাইকের গ্যারেজ, স্টিলের ওয়ার্কশপ আর টায়ারের দোকান। এই বাহনকে ঘিরে আবার দেশজুড়ে গড়ে উঠেছে লাখ লাখ মেরামতের দোকান। কন্ট্রোল বক্স পুড়ে যায়, স্টিয়ারিং ছিঁড়ে যায়, বিয়ারিং ভেঙে যায়, ব্রেক ‘লুজ’ হয়ে যায়, নষ্ট পার্টস সারাতে হয়, ইঞ্জিনের তেল বদলাতে হয়। মোটরের মিস্ত্রি, পেইন্টিং মিস্ত্রি, বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি, ইঞ্জিনের মিস্ত্রি, সহকারী—সব মিলিয়ে একেকটা দোকানেই ৭ থেকে ১০ জনের কর্মসংস্থান হয়। রহিমআফরোজ, পাওয়ার প্লাস দেশেই ব্যাটারি সংযোজন করছে। উৎপাদক, সংযোজক, চালক আর মেরামত মিলিয়ে এক দশকে তৈরি হয়েছে দারুণ প্রাণবন্ত এক স্থানীয় অর্থনীতি। কোনো রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা ছাড়াই দেশজুড়ে ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করেছে এই খাত। এটা জরুরি শিল্প না হলে কোনটা জরুরি শিল্প?
অথচ ইজিবাইক নিয়ে গণমাধ্যমের ভাষা খেয়াল করুন, ‘অবৈধ’, ‘নিষিদ্ধ’, ‘দাপিয়ে বেড়াচ্ছে’, ‘দৌরাত্ম্য’, ‘রাজত্ব’ ইত্যাদি। খেয়াল করুন, সব রকমের প্রযুক্তি ভালো, ডিজিটাল বাংলাদেশ ভালো, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ভালো, রোবট ভালো, কিন্তু শুধু রিকশার ‘অটোমেশন’ করা প্রযুক্তি ভালো নয়। এই যে পেডেলচালিত রিকশা থেকে অটোরিকশা/ইজিবাইক হলো, স্থানীয় পুঁজি, স্থানীয় উদ্যোগ এবং স্থানীয় চাহিদায় একটা গোটা শিল্প গড়ে উঠল, রিকশাচালকের অর্ধশত বছরের ঘামের কষ্ট লাঘব হলো, লাখ লাখ বেকার তরুণের কর্মসংস্থান হলো, কিন্তু ইজিবাইক ভালো নয়। কারণ, এ জিনিস হাইওয়েতে চললে শীর্ষ-ধনী-বৃদ্ধির দেশের ইজ্জত থাকে না।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বাংলাদেশের ওপর একটা প্রতিবেদন করেছিল ২০১৮ সালে, ‘দ্য রোবটস আর কামিং ফর গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স’। প্রতিবেদন বলছে, ব্যাপক অটোমেশনের ফলে গার্মেন্টসে কর্মসংস্থানের হার আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। বাস্তবেও আমরা দেখি, গাজীপুর, আশুলিয়া বা টঙ্গীতে গত কয়েক বছরে শত শত সোয়েটার কারখানা বন্ধ হয়েছে, এক ধাক্কায় হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছেন। বলা হচ্ছে, অটোমেশনের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশের শতকরা ৬০ ভাগ পোশাককর্মীই চাকরি হারাবেন (ডেইলি স্টার, ২০১৯)। অথচ পোশাকশিল্পে বছর বছর রপ্তানি চাহিদা কিন্তু ঠিকই বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে নতুন চাকরি তৈরি হচ্ছে না। অর্থাৎ শ্রমিকের কাজটা এখন করছে স্বয়ংক্রিয় মেশিন।
বাস্তবতা হলো, ঢাকার গার্মেন্টস, খুলনার পাটকল, উত্তরবঙ্গের চিনিকল থেকে ছাঁটাই হয়েছেন লাখো শ্রমিক। এসব অঞ্চলের গোটা স্থানীয় অর্থনীতিই ধসে পড়েছে। চারদিকে কাজের জন্য হাহাকার। গাজীপুরের ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক, খালিশপুরের কাজ হারানো মানুষ, সারা দেশের অল্পশিক্ষিত বেকার তরুণ দলে দলে ঋণ করে ইজিবাইক কিনেছেন। আমরা মহাসড়ক বানিয়েছি পৃথিবীর সর্বোচ্চ খরচে, কিন্তু সেখানে প্রায় অর্ধকোটি বেকারের জন্য জায়গা রাখার প্রয়োজন মনে করিনি। গণমাধ্যম, সরকার, পুলিশ নিজেদের শ্রমে-ঘামে তৈরি হওয়া গরিবের এই শিল্পকে চরম লাঞ্ছিত করেছে, অথচ বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরিতে সরকার যে ব্যর্থ, সেটা নিয়ে টুঁ শব্দ করেনি।
আমাদের কর্মসংস্থান আর ঠিক কবে, কীভাবে তৈরি হবে? চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হবে? আমেরিকা রোবট বানাবে, আর আমাদের এখানে আপনা-আপনি আন্তর্জাতিক মানের প্রোগ্রামার তৈরি হয়ে যাবে? লাখে লাখে চাহিদা আসবে? প্রোগ্রামার যে তৈরি হবে, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা থেকে ঝরে পড়া তরুণ আর গার্মেন্টস থেকে ছাঁটাই হওয়া তরুণকেও কি ঘাড়ে ধরে প্রোগ্রামারই বানানো হবে?
অভাবের তাড়নায় পড়ালেখা শেষ করতে না পারা সাভারের নাজমুলের মতো এ দেশের কয়েক কোটি স্বল্পশিক্ষিত তরুণের জন্য ন্যূনতম কোনো পরিকল্পনা আছে এই রাষ্ট্রের? নাজমুলের মতো একজন খেটেখাওয়া অটোরিকশাচালকের আত্মহত্যা কি আদৌ কাউকে লজ্জিত করে?