পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা (ক্যাশ) পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে আরও ১৫ জনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। রিমান্ডে থাকা তিন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদে আজ শুক্রবার এই তথ্য পেয়েছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবি সূত্র জানায়, গত ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি সরকারি ব্যাংকের ‘অফিসার ক্যাশ’ পদে নিয়োগ পরীক্ষা আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মাধ্যমে করা হয়। ওই দিন ১ হাজার ৫১১টি পদের বিপরীতে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় অংশ নেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ জন চাকরিপ্রত্যাশী। একাধিক প্রার্থীর দাবি, পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১০০টি প্রশ্নের প্রিন্ট করা উত্তর ফেসবুকে পাওয়া গেছে। ফেসবুকে উত্তর ছড়ানোর ঘটনায় চাকরিপ্রার্থীরা প্রশ্ন তোলেন, পরীক্ষা বিকেল ৪টার সময় শেষ হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ১০০টি প্রশ্নের ‘সঠিক উত্তর’ ফেসবুকে পাওয়া সম্ভব নয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কারণেই এটা হয়েছে।
ডিবি পুলিশ এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় প্রথমে পাঁচজন ও পরে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। বাড্ডা থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ছয়জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তাদের এখন ডিবি পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বাকি দুজনকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। দুদিন ও একদিন রিমান্ড শেষে কাল শনিবার ছয় আসামিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তোলা হবে।
অভিযান পরিচালনাকারী ডিবি তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদত হোসেন আজ প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রিমান্ডে থাকা আসামিরা বলেছেন ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষার দিন সকালে স্থাপন করা বুথে আরও ১৫ জন ব্যক্তি নিয়োগ প্রত্যাশীদের এমসি কিউ পদ্ধতির প্রশ্ন ও উত্তর মুখস্থ করিয়েছিলেন। তাদের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। এখন তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অভিযান চলছে। আইনের আওতায় আনা গেলে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।
ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সদস্যরা গত ৬ নভেম্বর পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে ৬ ঘণ্টা আগে তারা রাজধানীর বাড্ডা,বসুন্ধরা, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, রূপনগর, মিরপুর, মাতুয়াইল, শেওড়াপাড়া, শেরে বাংলা নগর ও পল্লবী এলাকায় মোট ১১ টি বুথ স্থাপন করে। তারা প্রতিটি বুথে ২০-৩০ জন করে চাকরিপ্রত্যাশীকে এমসি কিউ পদ্ধতির প্রশ্ন ও উত্তর মুখস্থ করান। চক্রের সদস্যদের সঙ্গে ২০০ চাকরিপ্রত্যাশীর সঙ্গে তিন কিস্তিতে দুই লাখ টাকা করে দেওয়া চুক্তি হয়। সেই অনুযায়ী চাকরিপ্রত্যাশীরা এমসিকিউ পদ্ধতির পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগে চক্রের সদস্যদের ২০ শতাংশ অর্থাৎ ৪০ হাজার টাকা দেয়। পরে ভাইভায় অংশ নেওয়ার আগে ২০ শতাংশ এবং সবশেষ চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর বাকি ৬০ শতাংশ টাকা দেওয়ার কথা।