* চাল মজুতের সক্ষমতা কম থাকায় সরকার বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে না।
* ছোট কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহের পরামর্শ।
দেশে চালের মজুত ও সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কম না বেশি, তার কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর দেশে ধানের উৎপাদন মোট কত দাঁড়িয়েছে, তা প্রাক্কলনে সমস্যা ছিল। এমন পরিস্থিতিতে দেশে চালের দাম দ্রুত বেড়েছে। এতে চালকলমালিক ও একশ্রেণির ফড়িয়া ব্যবসায়ী বেশি লাভবান হয়েছেন। চড়া দামের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দরিদ্র মানুষেরা।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ আয়োজিত ‘চালের দাম বাড়ছে কেন? কার লাভ, কার ক্ষতি’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল সংলাপে গতকাল রোববার বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে দেশে ধান-চালসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণে ও কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় একটি কৃষিপণ্য মূল্য কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের ধান ও চাল মজুত করার সক্ষমতা কম হওয়ায় বেশির ভাগ সময়ই সরকারের পক্ষে বাজারে প্রভাব ফেলার সুযোগ থাকে না। তিনি তুলনামূলক ছোট কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ ও তাঁদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন।
সংলাপে দেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও হাওর অঞ্চলের মোট ৯টি জেলা থেকে প্রায় ৪০ জন কৃষক, কৃষাণী ও কৃষি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, চালকলের মালিকেরা আগেই ধান কিনে মজুত করে রাখেন। এ কারণে চালের দাম বাড়লেও কৃষক তার ভাগ পান না। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ধান বিক্রি করতে হয়। তাই কৃষক ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তাঁরা আরও বলেন, সরকারিভাবে ধান কেনার কার্যক্রমে সবাই অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন না। তাই মিলমালিক অথবা বাজারে ধান বিক্রি ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
সংলাপে দেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও হাওর অঞ্চলের মোট ৯টি জেলা থেকে প্রায় ৪০ জন কৃষক, কৃষাণী ও কৃষি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।
সংলাপের বিশেষ অতিথি জাতীয় সংসদের কৃষি মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক কৃষি খাতে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন ভর্তুকি ও উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, এসব সুবিধা কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকার বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে।
চাষ লাভজনক না হওয়ায় ধানের উৎপাদন ক্রমাগত কমছে বলে উল্লেখ করেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ। তিনি বলেন, অনেকে ধান চাষ থেকে উচ্চ মূল্যের ফল-ফসলের দিকে ঝুঁকছেন। চাষযোগ্য জমিও কমছে। সব মিলিয়ে ধান চাষের ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হচ্ছে।
বাজারে চালের দাম বাড়লেও কৃষক লাভবান হন না বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক এম আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ধানের দাম বাড়ার অনেক আগেই কৃষক কম দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবির উৎপাদনের প্রাক্কলন নিয়ে সংলাপে উপস্থিত বক্তাদের মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, দেশে কোনো খাদ্যসংকটের আশঙ্কা নেই।
সরকারের হাতে এখন খাদ্যশস্য মজুত পর্যাপ্ত নয়। এটি খাদ্যনিরাপত্তার জন্য হুমকিকাজী শাহাবুদ্দিন, বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক
বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক কাজী শাহাবুদ্দিন বলেন, সরকারের হাতে এখন খাদ্যশস্য মজুত পর্যাপ্ত নয়। এটি খাদ্যনিরাপত্তার জন্য হুমকি।
সংলাপে বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির, বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম খোরশেদ আলম খান, বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. নাজিরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।