ও আমার ভাটির গাঙের নাইয়া,
দেখি মুখ তোর সংক্রান্তিতে সাধা;
সাগর বান্দিয়া ফের ছেঁড়া পাল ভাঙা
সারিন্দায় ঘাট দাও কাঙালিনী মার
ছেঁড়া বালুচরী আঁচলের কোল ঘেঁষে পারাবারে;
মাঝি রে কূলের ধসে গর্জে কোন কালাপানি, হায়!
সে গো ভয়ংকর তীর পাড়ি ধরে আদি-অনাদির;
ভাটিয়ালি ঠাঁই জাগে কোন দিগন্তরে মন; ওগো নদী...
তোমায় নাচের মুদ্রা ভেবে
আমি দেখি;
সাঁওতাল মুরমুর গ্রাম।
বুদ্ধধ্যানে পুঁতে দিয়েছি আলুবীজের খেত;
তুমি সব লালা খেয়ে ফেলো
চকলেট চুষে...
বালিকার মতো তোমার পোশাক বুনে ফেলে
মাকড়সার জাল
টেস্টিং সল্ট ঘুমের গভীরে গলে যাও
বিছানার শুভ্রতায় মিশে...
নিদ্রাকুসুম নিজেকে ড্রেসিং আয়নায় দেখে,
সঙ্গম আঁচড়ে ফেলেছিলে
আতরের ঘ্রাণ;
তুলো উড়বার ডানা মেলে,
কখনো কি ভেবেছিলে? নদীটার পাড় নেই
—পরাপার
পাহাড়ের পাদদেশে সাঁওতাল মুরমুর গ্রাম।
নদী উত্তাল, তবুও বৈশাখে বাঁশি বাজে
দুঃখী-দীর্ণ চাষাভুষোর চালা উড়ে যায়
সৈকতে ঝিনুক, অচেনা লতাগুল্ম।
নগরে নববর্ষের মিছিলে খুব উল্লাস
জন্মান্ধ বাউলেরা এখনো স্মৃতি–হারানো।
ঈশানীরা রচিছে ফের ঝড়ের পটভূমি
রাত্তিরে প্রত-দানবের গর্জন মেঘের ওপারে
প্রলয়মঞ্চের বাহিরে দূর দেশে
শান্ত নদী বয়ে যায়। বেলাভূমিতে নাচ
তবুও বাগানে কিছু পাখি ঢুলুঢুলু।
মনে নেই ধ্বংসস্তূপে একাত্তরে
সারি সারি লাশে বিষণ্ন ভোরের আলো,
নিথর নদী, নিঝুম প্রান্তর, শান্ত সরোবর,
পাহাড়ি ঝরায় অবুঝ বালিকাদের জলখেলা,
দখিনের ঘাটে নামেনি চাঁদ সদাগর?
বাতাসে উড়ছিল জামদানি, খোঁপার বেলি
আরও ছিল খড়ের ঘর, বাঁশি, দোতারা
ধানসিড়িতে জেগেছিল উত্তাল ফেনা।
তারপরে আদিগন্ত অকাল বৈশাখী তাণ্ডব—
জন্মভিটায় সেই থেকে আলপনা আঁকি।
আয় রে আমার লাল টিপ
কালো টিপ আয়
চোরপুলিশ খেলতে যাব
আমবাগিচায়
কোথায় গেলি বোকা টিপ?
বাটায় নাই পান!
গ্যাস জ্বলে না চুলায় দেখি
শুকনো পাতা আন।
আয় রে আমার দুয়োটিপ
লুডু খেলবি, আয়
তোর সোয়ামি দেখলে কেন
চোখ মারে আমায়?
ছুঁচরাজা উঠবে জেগে
কাঁকনটিপ, শোন
নাইতে গেলাম নদীর ঘাটে
খেয়াল রাখিস, বোন!
কথা ছিল
ভোরের দরজা খুলে
নতুনের সূচিত মুখশ্রী দেখতে যাবার।
তুমি কি টিকটকে কয়েদি এখন?
সাইবার বুলিংয়ে নাজেহাল?
নিরাপদ নও,
পুলিশও তুলছে প্রশ্ন, টিপ পরেছ কেন?
অদৃশ্য জাল দিবালোকে ধরছে শিকার।
উড়ছ ডানাহীন কনটেন্টের অস্থির রঞ্জনে।
তোমার পূর্ব–সঙ্গগুলি আর স্রোতপ্রতিম নয়।
প্রকৃত গন্তব্য বলে কিছু নেই।
বর্তমান কি খরগোশ, দৌড়াচ্ছে স্ক্রলে?
মানুষ কি পাড়ভাঙা ঢেউ?
মানস সরোবরে রাখোনি শতদলে।
নতুন পাতাও জানে,
প্রযুক্তি চতুর
প্রগতিতে নিজেই বল্লম।
আর কত দূর গেলে
আমাদের কসম হবে পায়রার আকাশ?
দূর পৃথিবীর শতাঙ্গ তোমার চোখ,
কোন রূপের শৃঙ্খলা খোঁজে?
আসক্তে শূন্যতা বাড়ে,
হৃদের গহ্বরে আমার মাটি খুঁজছে জল।
হে বৈশাখ,
খাদি পরা মেঘেরাও মৌলবাদি আজ।
সূর্যাস্তের নিচে
শব্দ-ছায়ার কঙ্কাল
নিয়ত রাত্রির দীর্ঘশ্বাস
বিষণ্ন স্মৃতির রূপান্তর
রুগ্ন ছায়া
গহিন পাণ্ডুর কোলাহল
দুরারোগ্য ব্যাধির শূন্যতা
না ফেরা পাখির গান,
প্রিয় গল্পের প্রতিমা
নিদ্রিত কোলাজ
শুশ্রূষার প্রবঞ্চনা।
প্রতারিত হবেন না লোভে
জেনে–বুঝে–মেনে করবেন, খাঁটি জিনিস ধরবেন।
একমাত্র আমরাই দেব আপনাকে সুলভে।
ঘরে বসে খেতের পুঁই, সেলাইয়ের সুই
মাচার লাউ, ঢেকির চাল কাড়া-আকাড়া।
বারোফুট আখও আমরা দেব, চান তো আখের চারা।
খেজুরের গুড় নারকেলি, জলের মাছ চিতল-তেলাপিয়া,
সংগীতের সুর-তাল-লয়, শ্রোতাদের হিয়া।
নদীর কিনার দেব, টাটকা মাছও।
যদি চান, ফলসহ দেব ফলের গাছও।
কাজের বুয়া, বুয়ার শাড়ি, সঙ্গে ফ্রি লিপস্টিক
ঘড়ি ধরে বসে থাকবেন কাঁটায় কাঁটায় পৌঁেছ যাবে ঠিক।
কী চান আপনি?
শুধু একবার মুখ ফুটে অথবা মুখ ফসকে বলে ফেলুন।
আপনি চাইলে
আপনার শিশুর জন্য এনে দেব হাওয়াভর্তি প্রাকৃতিক বেলুন।
জন্ম থেকে মৃত্যু, তেল থেকে নুন
জন্মনিরোধক ট্যাবলেট অথবা ভ্রূণ
চিন্তা করবেন না। সব এনে দেব।
ভাবছেন লুঙ্গি, জাঙ্গিয়া, শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট?
থাকুন না স্বস্তিতে
ঘরে বসে আপনার পছন্দের নদীটাও কিনে নিতে পারবেন
মাসিক কিস্তিতে;
শুধু সাঁতারটা আমরা ডেলিভারি দিই না।
ঝিনুকের মধ্যে ঢুকে শামুক মুখ
খুঁজতে খুঁজতে বেলা গেল—
এই বহুমাতৃক হ্রদে বসন্ত হাওয়া
শুধু রং বদলায় আর ভিনাস ফ্লাইট্র্যাপ
অনুভূতিগুল্ম হয়ে
শুষে নেয় রাতের বালিশ কোষ
চাঁদের পানকৌড়ি যতই ঠোক্কর মারুক আকাশে
তা থেকে শুধুই পরম্পরার গল্প ঝরে পড়বে
সুতরাং রাতের মধ্যে ঢুকে
রাত শুধু রং বদলাবে—
রাতগল্প আরও জটিল আরও
রঙিন হবে—
একবার সুতো কেটে গেলে পর আর কখনোই
জোড়া লাগে না আগেকার মতন
গিঁটগুলো খুব বিশ্রী রকম জেগে থাকে
মনে করিয়ে দিতে—
এই সুতোটা কেটেছিল
এই সুতোটা কেটেছিল
ধরুন, নাড়ির কথাই
জন্মের পর নরম, মসৃণ নাড়িটি কাটা হলে
নাভিতে কেমন গিঁট পাকিয়ে থাকে সারা জীবন