দেশের বেশির ভাগ নদ-নদী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে বহু আগে। এখন কালেভদ্রে রংপুর বিভাগের কয়েকটি নদী ও খালের স্বচ্ছ পানিতে দেখা মেলে। বৈরালি নামে বেশি পরিচিত মাছটির কৃত্রিম প্রজননে সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। কৃত্রিমভাবে এর পোনা উৎপাদনের প্রযুক্তি এখন সংস্থাটির বিজ্ঞানীদের হাতে। এতে এখন মাছটি পুকুরসহ অন্যান্য জলাশয়ে চাষ করা যাবে।
বৈরালি, বরালি ও কোকসা—এ রকম নানা নামে পরিচিত মাছটি একসময় সিলেট, নেত্রকোনার হাওর ও রংপুর বিভাগে বেশ ভালোই মিলত। ২০১৫ সালে প্রকৃতিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন মাছটিকে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হিসেবে ঘোষণা করে।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের নীলফামারীর সৈয়দপুরে অবস্থিত স্বাদু পানি উপকেন্দ্রে বৈরালি মাছ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। এতে নেতৃত্ব দেন উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা খোন্দকার রশীদুল হাসান ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শওকত আহম্মেদ। তাঁরা রংপুর অঞ্চলের চিকলী, বরাতি, বুড়িখরা ও তিস্তা নদী থেকে বৈরালি মাছ সংগ্রহ করে পুকুরে কৃত্রিমভাবে পোনা উৎপাদনের গবেষণা শুরু করেন। গত ২০ মার্চ তাঁরা প্রথম পোনা উৎপাদনে সক্ষম হন।
>১৫ থেকে ২৫ গ্রাম ওজনের একেকটি বৈরালি মাছের ডিম ধারণক্ষমতা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজারটি।
গবেষণায় দেখা যায়, ১৫ থেকে ২৫ গ্রাম ওজনের একেকটি বৈরালি মাছের ডিম ধারণক্ষমতা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজারটি। মাছটির প্রজননকাল নভেম্বর থেকে মার্চ। সবচেয়ে বেশি প্রজনন হয় জানুয়ারিতে। ডিম থেকে রেণু হয়ে পোনা পর্যন্ত উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়ায় সময় লেগেছে ৪০ থেকে ৫০ দিন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সাফল্যের ফলে প্রথমত আমরা মাছটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করলাম। দ্বিতীয়ত, দেশের মানুষ তাঁদের পুকুরে এই মাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে পারবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বৈরালি মাছের আরও পাঁচটি উপপ্রজাতি আছে। আমরা পর্যায়ক্রমে সেগুলোরও কৃত্রিম প্রজনন করব।’
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এর আগে ২০টি বিপন্ন প্রজাতির মাছের কৃত্রিম প্রজনন করেছেন। ফলে বাজারে ছোট মাছের সরবরাহ বেড়েছে। উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় পাবদা, মলা, ডেলাসহ এসব মাছের দামও আগের চেয়ে কমেছে।