বেড়ায় বিধ্বস্ত সড়কের পাশে 'মৃত্যুফাঁদ'

পাবনার বেড়া উপজেলায় বেড়া-মোহনগঞ্জ-নাটিয়াবাড়ী সড়কের মোহনগঞ্জ থেকে পেঁচাকোলা পর্যন্ত অংশের বেশির ভাগ স্থান বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে।

এতে সড়কের এই অংশ দিয়ে যাতায়াতকারীদের চরম দুর্ভোগ যেমন পোহাতে হচ্ছে তেমনি প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার কবলে পড়া যানবাহনগুলো মাঝেমধ্যেই সড়কের পাশে বাড়িঘরের ওপর উল্টে গড়িয়ে পড়ছে। এতে বিধ্বস্ত সড়কের পাশে বাস করা পরিবারগুলো রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে। সড়কের পাশে ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন উল্টে পড়ায় গত পাঁচ বছরে ১ জন নিহত ও ১০ থেকে ১৫ জন আহত হয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ডাকবাংলো থেকে মোহনগঞ্জ হয়ে নাটিয়াবাড়ী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশ দীর্ঘদিন ধরে বেড়া উপজেলার প্রধান অভ্যন্তরীণ সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাস, ট্রাকসহ অসংখ্য যানবাহন প্রতিদিন এ সড়কে চলাচল করে। সড়কটির দুই পাশে নদীভাঙনে নিঃস্ব হওয়া শত শত পরিবার ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করছে। এসব ঘরবাড়ির বেশির ভাগই সড়কের সঙ্গে লাগোয়া হলেও সেগুলোর অবস্থান সড়ক থেকে কিছুটা নিচে।

বছর দেড়েক আগে এই সড়কের পেঁচাকেলা থেকে নাটিয়াবাড়ী পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার অংশ মেরামত করা হলেও ডাকবাংলো থেকে পেঁচাকোলা পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার অংশ মেরামতের বাইরে থেকে যায়। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারহীন অবস্থায় পড়ে থাকায় সড়কের এই অংশটি নাজুক হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মোহনগঞ্জ থেকে পেঁচাকোলা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার অংশ একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। এই অংশে অসংখ্য গর্ত তৈরি হওয়ায় এবং ভেঙেচুরে একাকার হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে এই অংশ দিয়ে যানবাহন চলছে। সড়কটি সংস্কার না করায় যাত্রীদের যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তেমনি মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে সড়কটির দুই পাশে বাস করা অসংখ্য মানুষ।

এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, সড়কের মোহনগঞ্জ থেকে পেঁচাকোলা পর্যন্ত অংশটি রীতিমতো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কে তৈরি হওয়া বড় বড় গর্তের কারণে প্রায়ই ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। উল্টে যাওয়া যানবাহন কখনো কখনো সড়ক থেকে পাশের বাড়িঘরের ওপর গিয়ে পড়ছে। এতে ঘটছে হতাহতের ঘটনা।

বছর পাঁচেক আগে গভীর রাতে মালবোঝাই একটি ট্রাক এভাবে উল্টে সড়কের নিচে একটি ঘরের ওপর পড়লে ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যান আনিস নামের এক যুবক। এ ছাড়া পাঁচ বছরে এ ধরনের বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১০ থেকে ১৫ জন।

নিহত আনিসের বাবা গজ প্রামাণিক ও মা মনোয়ারা খাতুন বলেন, দুর্ঘটনার দিন আনিস ঘরে একা থাকায় বাড়ির অন্যরা রক্ষা পেয়েছিলেন। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় বাড়ির বাকি ছয় সদস্য পুরোনো ঘরেই বাস করেন। ভাঙা সড়ক থেকে আবারও কোনো যানবাহন উল্টে পড়তে পারে ভেবে পরিবারের সদস্যরা সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকেন। এমনকি রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না তাঁদের।

সড়কের পাশে বাস করা মিনারা খাতুন বলেন, ‘ছয়-সাত মাস আগে দিনের বেলায় ভুট্টাবোঝাই একটি ট্রাক আমার একটা ঘরের ওপর আইস্যা পড়ল। ওই সময় আমরা কেউ ঘরে না থাকায় বাঁইচ্যা গেছি। কিন্তু এখন সব সময় আতঙ্কে থাকি, এই বুঝি ঘরের ওপর গাড়ি আইস্যা পড়ল।’

ভাঙা সড়কের পাশে আল-আমিন হোসেনের মুদি দোকান। তিনি বলেন, ‘সড়কের অবস্থা এতই খারাপ যে প্রায় দিনই এ জায়গায় কোনো না কোনো গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে বা দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার ফলে কখনো কখনো গাড়ি সড়কের থ্যা গড়ায়া নিচে পড়ে।’

হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই সড়কটির জন্য এলাকাবাসীর দুর্ভোগের সীমা নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সড়কটি মেরামতের ব্যাপারে যত দ্রুত এগিয়ে আসবে, ততই মঙ্গল হবে।’

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বেড়া কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী আবদুল কদ্দুস বলেন, ‘সড়কটি মেরামতের ব্যাপারে প্রাক্কলন সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি চলতি বছরের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।’