শিল্পকারখানার ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়িয়ে চাহিদাপত্র (ডিমান্ড নোট) দিচ্ছে তিতাস গ্যাসসহ পাঁচটি বিতরণ কোম্পানি। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম নির্ধারণ করেছে ৯ টাকা ৬২ পয়সা। কিন্তু এর প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি দাম ধরে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা হিসেবে বিতরণ কোম্পানিগুলো চাহিদাপত্র দিচ্ছে।
আইন অনুযায়ী, গ্যাসের দাম বাড়ানোর একমাত্র ক্ষমতা বিইআরসির। সেই বিইআরসিকেও গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য গণশুনানি করতে হয়। বিতরণ কোম্পানির সর্বশেষ দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গত ১১ থেকে ২১ জুন বিইআরসি গণশুনানি করেছে। তবে এখনো কোনো আদেশ দেয়নি। অথচ গত এপ্রিল থেকে বাড়তি দামে চাহিদাপত্র দিচ্ছে বিতরণ কোম্পানিগুলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের সব থেকে বড় বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৪ টাকা ৯০ পয়সা দাম ধরে ডিমান্ড নোট দিতে পেট্রোবাংলা আমাদের নির্দেশ দিয়েছে। আমরা গ্যাসের দাম বাড়ার আগেই এ কারণে বাড়তি দামে ডিমান্ড নোট দিচ্ছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিইআরসির আদেশের বাইরে গ্যাসের বেশি দাম ধরে ডিমান্ড নোট দেওয়ায় আইনের ব্যত্যয় হয়েছে কি না, সে বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’
জানতে চাইলে বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিইআরসি গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো ঘোষণা দেয়নি। গ্যাসের দাম বাড়ানোর আগে এভাবে নিজেরা দাম বাড়িয়ে দিতে পারে না। এটি হতে পারে না। এটি আমার জানা নেই।’
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়ার আগেই গ্যাস বিতরণ কোম্পানির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা ২৬ এপ্রিল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে একটি বৈঠক করে। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু হলে গ্যাসের দাম বাড়বে। তাই শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগ যাঁরা নেবেন, তাঁদের এখন থেকেই বাড়তি দামে চাহিদাপত্র দেওয়া হবে। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে বাড়তি দামে চাহিদাপত্র দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর একমাত্র এখতিয়ার বিইআরসির। কোনো বিতরণ কোম্পানি গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ডিমান্ড নোট দিলে সেটা স্পষ্টতই বেআইনি।
জানা গেছে, সম্প্রতি দুই দফায় বাণিজ্যিক ও শিল্পে নতুন গ্যাস সংযোগ ও গ্যাসের ব্যবহার (লোড) বাড়ানোর অনুমতি দিয়েছে সরকার। যাঁরা এই অনুমতি পেয়েছেন, তাঁদের চাহিদাপত্র নিতে হচ্ছে বর্ধিত দামে।
বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, সরকার এখনো গ্যাসের মূল্য বাড়ায়নি। কিন্তু বিতরণ কোম্পানিগুলো বেশি দামে চাহিদাপত্র দিচ্ছে। তিনি নিজেও বর্ধিত দামে চাহিদাপত্র নিয়েছেন।