মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের ৩ নম্বর গেট থেকে মূল বেদিতে যেতে মেঝের টাইলসের অনেকগুলোই ভাঙা। নতুন-পুরোনো টাইলসগুলোর রঙের মিল নেই। বাগান-প্রাচীরে সিমেন্টের অংশে নতুন সাদা রং ইতিমধ্যে কোথাও কোথাও ফিকে হয়ে গেছে। কবরস্থানের ভেতরের দিকে সব আগাছা পরিষ্কার হয়নি। সার বছর উপেক্ষিত থাকা স্মৃতিসৌধ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে সংস্কার করা হচ্ছে অত্যন্ত দায়সারাভাবে।
ভাঙা ও আলগা হয়ে আসা টাইলস সংস্কারকাজের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদার আহসান হাবীব পাটোয়ারী বলেন, ‘টাইলস বাসাবাড়িতে লাগানোর জিনিস; মাঠেঘাটে অনেক সময় ঠিকমতো বসে না। ভারী গাড়ি ঢুকে কিছু টাইলস ভাঙছে।’
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সামনে রেখে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। তবে ঝাড়পোছ আর সংস্কারকাজে অনেকটাই দায়সারা ভাব লক্ষণীয়। কর্তৃপক্ষ বলছে, বাজেট যথেষ্ট না হওয়ায় নতুন করে সব করা সম্ভব হয়নি।
গতকাল সোমবার গিয়ে দেখা যায়, ১ নম্বর গেট থেকে স্মৃতিসৌধের বেদি পর্যন্ত ধোয়ামোছার কাজ চলছে। শুকনো পাতা ঝাঁট দিয়ে জড়ো করছেন কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ৩ নম্বর গেট থেকে বেদির দিকে হেঁটে আসতে দেখা যায়, মেঝেতে লাল ইটের পাশে সার বেঁধে বসানো টাইলসের অনেকগুলোই ভাঙা। বেদির সামনের অংশেও একই অবস্থা। মাঝেমধ্যে কিছু নতুন টাইলস বসানো হয়েছে। নতুন-পুরোনো টাইলস মিলে একই সারিতে কোথাও ঘিয়ে রঙের, আবার কোথাও ধূসর রং। নতুন টাইলসের অনেকগুলোই নড়বড়ে; মেঝে থেকে আলগা হয়ে আসছে। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের বাগান-প্রাচীরের নিচের অংশে সাদা-কালো রং করা হয়েছে। সাদা রং সব জায়গায় সমান হয়ে বসেনি। অনেক জায়গায় হালকা হয়ে গেছে।
মূল ফটক থেকে বাঁ দিকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থান। বাইরের দিকের কবরগুলো নতুন রং করায় বেশ চকচকে; তবে ভেতরের দিককার অনেক কবরের পাশের আগাছা ভালোভাবে পরিষ্কার হয়নি। কবরস্থানে প্রাচীরের নিচু থামগুলোর কয়েকটির ওপরের অংশ ক্ষয়ে গেছে। মেরামত না করেই তাতে রং করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্মৃতিসৌধ এলাকায় কর্মরত একজন বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের সংস্কারকাজ নিম্নমানের হয়েছে। প্লাস্টিক পেইন্টের জায়গায় নিম্নমানের রং ব্যবহার করা হয়েছে।
মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সংস্কারকাজের জন্য এ বছর ৩৮ লাখ টাকায় কাজটি পেয়েছে মেসার্স হাবিব অ্যান্ড কোং নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর স্বত্বাধিকারী আহসান হাবীব পাটোয়ারী বলেন, তাঁরা ধোঁয়ামোছা, আগাছা পরিষ্কার, রং করা এবং কিছু নতুন টাইলস বসানোর কাজ পেয়েছেন। ধোয়ামোছার কাজ বাদে বাকি কাজগুলো প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।
মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি। তবে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। তারাই স্মৃতিসৌধের সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের দরপত্র আহ্বান করেছে। করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (অঞ্চল-৪) ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, পুরো কাজ ৪০ লাখ টাকার মধ্যে শেষ করতে হবে। এই বাজেটে পুরো এলাকার সংস্কারকাজ সম্ভব নয়। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্ব পেলে স্থপতি নিয়োগ করে পুরো স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্যবর্ধনের পরিকল্পনা আছে।