বুকভরা ভালোবাসার শতবর্ষী মেলা

১০ মহররমে মেহেরপুরের কুতুবপুরে বসে শতবর্ষী এই মেলা। ছবি: প্রথম আলো
১০ মহররমে মেহেরপুরের কুতুবপুরে বসে শতবর্ষী এই মেলা।  ছবি: প্রথম আলো

যাঁদের হাতে অঢেল টাকা কিংবা যাঁরা চাইলেই হাতের কাছে পেয়ে যান সবকিছু, তাঁরা এই মেলায় আসার আনন্দ বুঝতে পারবেন না। এই মেলায় আসতে হয় বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে। বছরের পর বছর ১০ মহররম বসছে এই মেলা, মেহেরপুরের কুতুবপুর গ্রামে। দল বেঁধে আসছে মানুষ মেলায়, বহুদিন যাঁদের দেখা হয়নি, তাঁরা এসে কবির সুমনের ভাষায়ই হয়তো বলছেন, ‘বন্ধু, কী খবর বল?’

শতবর্ষী এই মেলা সম্পর্কে মেহেরপুরের ওই এলাকার ফজের মণ্ডল বলেন, ‌‘আমি ৮০ বছর পার করেছি। কুতুবপুর গ্রামের মহররমের মেলাটি আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি।’ একই বয়সের পানেজান খাতুন বলেন, ‘বড় ভাই কালুই প্রথম আমাকে মেলাতে নিয়ে যায়। তখন বয়স ছিল ৬ বা ৭ বছর।’

কত কিছুই না বিক্রি হয় এখানে! কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলা থেকে আবদুর রহমান এসেছেন বাঁশের তৈরি কুলা, মুড়ি ঝাড়া চালন, খই ঝাড়া চালন, বেতের ঝুড়িসহ আরও ১০ রকমের রান্নাঘরে নিত্যব্যবহার্য জিনিসের পসরা নিয়ে। তিনি বলেন, সেই প্রাচীনকাল থেকে বাপ-দাদাদের সময় থেকেই মহররমের ১০ তারিখে এই কুতুবপুরের মাঠে মেলায় আসছি!’

মেলায় মিষ্টি থাকছে, খেলনা থাকছে, থাকছে চুড়ি, ফিতা, আলতা থেকে ঘর-গেরস্তালির বিচিত্র সব জিনিস। জিলাপিই ভাজা হচ্ছে ৫০টির বেশি দোকানে। বিক্রি হচ্ছে দেদার। কারণ, মেলা শেষে যে জিলাপি কিনেই বাড়ি ফিরতে হয়! সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলেছে নাগরদোলা। আর আছে ঝুড়ি কানমুচরি—এটা এ মেলার ঐতিহ্য।

মেলা প্রাঙ্গণেই শুধু এ মেলার বিস্তার নয়। মেলা উপলক্ষে জামাই আর আত্মীয়স্বজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এখানে। তাই বাড়িতে বাড়িতে খই, মুড়কি, নারকেল আর চালের আটার নাড়ু বানানো হয়েছে। মেলা থেকে দই কিনে মুড়কি দিয়ে খাওয়ার রেওয়াজটিও ধরে রেখেছেন এলাকাবাসী।

গ্রামের প্রবীণ মেহেরুন বেগম স্মৃতিতে ভেসে বলেন, ‘মেলা থেকে আগে লেইস ফিতা, আলতা, সুগন্ধি তেল, পাটের তৈরি শিকি (শিকে) কিনতাম। সময় বদলেছে, এখনকার মেয়েরা ওই সব আর ব্যবহার করে না। তারপরও মেলায় আসি।’

আয়োজক কমিটির সভাপতি আফরাজুল হক বলেন, এই মেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে কুতুবপুর গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক দল প্রতিবছরের মতো এবারও মেলা শুরু হওয়ার এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য গাড়ি পার্কিংয়ের আলাদা স্থান, টয়লেট, সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশের ব্যবস্থা ছিল।

কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল আলম বলেন, কুতুবপুর গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিবছর স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে অব্যাহত রেখেছেন এই মেলার আয়োজন।