মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) সি আর (চিত্তরঞ্জন) দত্তের (বীর উত্তম) অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সবুজবাগের শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী শ্মশানঘাটে এই বীরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এর আগে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গান ফায়ারের মাধ্যমে সম্মান জানানো হয়।
আজ সকাল আটটার দিকে মহাখালী ডিওএইচএসে সি আর দত্তকে শ্রদ্ধা জানান বিএনপিসহ বনানী ও মহাখালী ডিওএইচএস এলাকার মানুষ। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেও শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। বিএনপির পক্ষ থেকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সি আর দত্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। সেখানে সি আর দত্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সেনাবাহিনীর সাবেক সহকর্মীরাও।
সি আর দত্তের ছেলের হাতে দলের পক্ষ থেকে শোকবাণী তুলে দিয়ে হাফিজউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাঁর মৃত্যুতে দেশ ও জাতি মহান সন্তানকে হারাল।
আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে, আমাদের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার জন্য এসেছি। আমরা সবাই তাঁকে অত্যন্ত ভালোবাসতাম।’
এরপর সকাল সাড়ে আটটার দিকে সি আর দত্তকে নেওয়া হয় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সেখানে সেনাবাহিনীর একটি দল সামরিক সম্মান জানানোর জন্য গান স্যালুট দেয়।
মন্দিরে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে সি আর দত্তকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সি আর দত্তের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদ, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটসহ আরও অনেক সংগঠন।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সি আর দত্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সি আর দত্ত শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না, মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলেন। দেশের যেকোনো ক্রান্তিকালে জাতিকে সঠিক পথনির্দেশক হিসেবে সব সময় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর সাহসী ভূমিকা জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে। এ স্বাধীন বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন, সে ক্ষেত্রে তাঁর (সি আর দত্ত) অনন্য ভূমিকার কথা জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে।’
বেলা ১১টা পর্যন্ত সি আর দত্তকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে রাখা হয়। এরপর তাঁকে আনা হয় সবুজবাগের শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী কালিমন্দিরে। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
প্রথমে পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা। এরপর তাঁর সম্মানে সামরিক কায়দায় ১৫টি ফাঁকা গুলি (হলি ফায়ার) ছোড়া হয়। এ সময় এই বীর উত্তমকে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামীম উজ জামান, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী, সেনাবাহিনীপ্রধানের পক্ষ থেকে মেজর জেনারেল মো. মুশফেকুর রহমান এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মো. সাফিনুল ইসলাম। সবশেষে বিউগলের করুণ সুরে সি আর দত্তকে রাষ্ট্রীয় সালাম জ্ঞাপনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। এরপর তাঁর শ্মশানঘাট অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
গত ২৫ আগস্ট সি আর দত্ত যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একটি হাসপাতালে মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। তিনি মুক্তিযুদ্ধে ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন। তিনি আমৃত্যু বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ছিলেন।
সবুজবাগের শ্মশানঘাটে কথা হয় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্তের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এ বেদনা কোনো দিনই পূরণের নয়। তিনি সব সময় এই বাংলার মানুষের অধিকারের কথা বলতেন।