বছরখানেক আগে নগরের মেহেদীবাগের একটি বাড়িতে যাত্রা করেছিল বিস্তার আর্ট কমপ্লেক্স। লক্ষ্য ছিল শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চার বিস্তার। সে লক্ষ্যে কতটুকু অর্জিত হয়েছে তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বর্ষপূর্তিতে আক্ষরিক অর্থেই শিল্পের সব মাধ্যমকে হাজির করা হয়েছিল দর্শকের সামনে। বিস্তার যা করতে চায় সেটাই যেন তুলে ধরা হলো আরও বড় পরিসরে।
১ থেকে ৩ জানুয়ারি বিস্তার আর্ট কমপ্লেক্স আয়োজন করেছিল শিল্পোৎসব। জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এই উৎসবে ছিল শিল্প প্রদর্শনী, নাচ, সংগীত, নাটক, আলোকচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। শিল্পবোদ্ধা থেকে তরুণ তুর্কি, উৎসবে শামিল ছিলেন সব শ্রেণির দর্শক।
আয়োজনের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি ‘লেট দা গুড টাইমস রোল’ শিরোনামে শিল্পকলার জয়নুল আবেদিন গ্যালারিতে আয়োজন করা হয় শিল্প প্রদর্শনীর। প্রদর্শনীর গ্রন্থনা ও পরিকল্পনায় করেছেন মিশুক এহসান, শিল্পের অঙ্গনে যিনি একেবারেই নবীন। তবে গোছানো একটি প্রদর্শনীই উপহার দিলেন তিনি। সাতজন নবীন শিল্পীর শিল্পকর্ম নিয়ে এই আয়োজনে ছিল পেইন্টিং, স্থাপনা শিল্প, ভিডিও আর্ট আর পারফরমেন্স। প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া শিল্পী অপু ধর, জয়তু চাকমা, মোহাম্মদ আলি, মুজাহিদ মুসা, তানিয়া নাজনীন, সুমিত চক্রবর্তী ও মারুফ আদনানের প্রকাশ ভঙ্গিতে ভিন্নতা থাকলেও তাঁরা সমসাময়িক বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাননি। ছুঁয়ে গেছেন শিল্পের সাম্প্রতিকতম ধারাটিকেও।
‘আমরা উড়ে যেতে চাই’ শিরোনামে জয়তু চাকমার শিল্পকর্মটি ছিল প্রদর্শনীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ। স্থাপনা শিল্প ও পেইন্টিংয়ের সমন্বয়ে মিশ্রমাধ্যমে কাজটি উপস্থাপন করেছেন তিনি। আয়তাকার একটি কাচের বাক্সে রাঙামাটির মানচিত্রের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। নানিয়ার চর, শুভলংসহ নানান নামের জায়গার ওপর দিয়ে ঘুরছে রঙিন মাছ। আর পিঠে থুরং(ঝুড়ি) নিয়ে জুমচাষিরা ডুবে আছে পানিতে। এক প্রান্তে ধ্যানস্থ বুদ্ধের মূর্তি জল থেকে মাথা তুলে সবকিছু দেখছে নির্বিকারভাবে। বাক্সের পেছনে রক্তে রঞ্জিত মানুষের দেহাবয়ব ক্যানভাসে তুলে ধরা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আর কী বলার থাকতে পারে! বিপন্নতার সব অনুভূতিরই অনুবাদ করেছেন জয়তু।
দ্বিতীয় দিন চট্টগ্রামের ব্যান্ড দল ‘বে অব বেঙ্গল’, রাঙামাটির ‘রাঞ্জুনি’ ও কুষ্টিয়ার টুনটুন বাউল ও তার দল গান পরিবেশন করেন। বিকেল থেকে রাত দশটা অবধি চলেছে সংগীতের আসর। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ শ্রোতারা শিল্পীদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে, নেচে গেয়ে শিল্পকলার উন্মুক্ত চত্বরে প্রাণের সঞ্চার করেছিলেন।
৩ জানুয়ারি উৎসবের শেষ দিন বিকেল পাঁচটায় শিল্পকলা একাডেমির মূল মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয় দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। ১৭ মিনিট দৈর্ঘ্যের শবনম ফেরদৌসী পরিচালিত ইচ্ছা বসন্ত চলচ্চিত্রের বিষয় ছিল তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজন। জাঁ-নেসার ওসমানের চলচ্চিত্র উচ্চৈঃশ্রবার উচ্চাভিলাষ চলচ্চিত্রটি মূলত পুরান ঢাকার একটি ঘোড়ার আত্মকাহিনি। এর পর ছিল ঢাকার নৃত্য সংগঠন জাগো আর্ট সেন্টার ও নৃত্যশিল্পী সংস্থা, চট্টগ্রামের শিল্পীদের নাচ পরিবেশনা। সমাপনী অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিল ঢাকার শূন্য রেপার্টরি থিয়েটারের মঞ্চনাটক লাল জমিন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই নাটকে একক অভিনয় করেন মোমেনা চৌধুরী।