আজ শনিবার (২১ মে) বিশ্ব মেডিটেশন দিবস। বাংলাদেশে বিশ্ব মেডিটেশন দিবস পালনের মূল উদ্যোক্তা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। ‘ভালো মানুষ ভালো দেশ স্বর্গভূমি বাংলাদেশ’—এই প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালনে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী মানবিক সংগঠন কোয়ান্টাম। এই সংগঠনের উদ্যোগে আজ ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রে এবং দুই শতাধিক উন্মুক্ত স্থানে সাংগঠনিক এবং ঘরে ঘরে ব্যক্তিগতভাবে লাখো মানুষ সম্মিলিত মেডিটেশনে অংশ নিচ্ছেন।
গত বছর থেকে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হচ্ছে দিনটি। আজ সকাল সাড়ে ছয়টায় সারা দেশে এবং দেশের বাইরে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন শাখা ও ভার্চ্যুয়াল সেলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ধ্যানমগ্ন হন। দিবসটি উপলক্ষে শুধু এক দিনের আয়োজন নয়, মাসব্যাপী আয়োজিত হচ্ছে শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষের জন্য রচনা, চিত্রাঙ্কণসহ নানা প্রতিযোগিতার।
মনের সর্বজনীন ব্যায়াম হচ্ছে ধ্যান বা মেডিটেশন। যেকোনো বয়সের মানুষ প্রতিদিনই এটি চর্চা করতে পারেন। মেডিটেশনের নিয়মিত অনুশীলন জাগিয়ে তোলে মানুষের ভেতরের ইতিবাচক সত্তাকে, শুভ শক্তিকে। নিয়মিত মেডিটেশন চর্চায় রাগ, ক্ষোভ, দুঃখ হতাশা, দুশ্চিন্তা, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ দূর হয়। নেতিবাচক থেকে ইতিবাচকতায় বদলে যায় দৃষ্টিভঙ্গি। মন প্রশান্ত থাকলে, মমতা জাগলে পারিবারিক, পেশাগত, সামাজিক সম্পর্কগুলোও সুন্দর হয়। মানসিক চাপমুক্ত থাকা যায় বলে বাড়ে পেশাগত দক্ষতা। শুধু নিয়মিত মেডিটেশন চর্চা করেই একজন মানুষ পেতে পারেন প্রশান্তি, সুস্বাস্থ্য ও সাফল্য। এসব প্রেক্ষাপট সামনে রেখে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে এখন প্রায় ৫০ কোটি মানুষ নিয়মিত ধ্যান বা মেডিটেশন করেন। গত কয়েক বছরে বিশ্বে কিছু প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের উদ্যোগে ২১ মে ‘বিশ্ব মেডিটেশন দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। উজ্জীবিত হচ্ছেন শক্তি ও উদ্যমে। নতুন গতি অনুভব করেছেন স্বাস্থ্য ও মনে।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিয়মিত মেডিটেশন চর্চাকারী ব্যক্তি বোঝেন মেডিটেশন বা ধ্যানচর্চা একজন মানুষের ভেতরে কীভাবে শুভ শক্তি বা ভালো বৈশিষ্ট্যগুলোকে জাগিয়ে তোলে। নিয়মিত মেডিটেশন চর্চাকারীর মনের ভেতর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে আত্মবিশ্বাস, সাহস, সমমর্মিতা, পরার্থপরতা, দেশপ্রেমসহ যাবতীয় মানবিক গুণাবলি। পাশাপাশি এ চর্চা ‘মন্দ’ জিনিসগুলোকে মুছে ফেলতে সাহায্য করে।
এই মন্দের ভেতর রয়েছে রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা, ঈর্ষা, লোভ, লালসা, অহং, হীনম্মন্যতা, ভয়, দুশ্চিন্তা, নেতিবাচক চিন্তা, অবিশ্বাস আর সংশয় ইত্যাদি সব আত্মবিধ্বংসী উপাদান। সব মিলিয়ে মন্দ মুছে মন হয় ময়লামুক্ত।
মেডিটেশন হচ্ছে সেই কৌশল বা প্রক্রিয়া, যা এ দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে হাজার বছর ধরে। সর্বস্তরে এ চর্চা আবারও ছড়িয়ে গেলে মানুষের ভেতরের ভালো সত্তাটি অধিক সক্রিয় হয়ে উঠবে। জগতে ভালোর ভাগই বেশি। আর প্রত্যেক মানুষের ভেতর ভালো সত্তাটির অংশই বেশি থাকে। কিন্তু পারিপার্শ্বিক নানা চাপে অনেক সময় মন্দ সত্তাটি অধিক শক্তিমান হয়ে ভালো সত্তাকে চেপে ধরে। মেডিটেশন তখন সেই ভালো সত্তাটিকে বাঁচিয়ে তোলে।
বছর পাঁচেক আগে উইল উইলিয়ামস নামের একজন ব্রিটিশ মেডিটেশন প্রশিক্ষক প্রথম দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেন। উইল উইলিয়ামস অনিদ্রার রোগী ছিলেন। মেডিটেশনের মাধ্যমে নিরাময়ের পর তিনি এ সম্পর্কে আরও উৎসাহী হয়ে ওঠেন। গভীর ধারণা লাভের জন্য তিনি ভারতে এসে সেখানকার দুজন গুরুর সান্নিধ্য লাভ করেন। সেই সঙ্গে চীন, মিসর ও আমাজন অঞ্চলের ধ্যান সম্পর্কে পাঠ নেন। একপর্যায়ে ‘বিজা’ মেডিটেশন নামে একটি ধ্যানপদ্ধতির প্রবর্তন করেন। যার মূল সুর উৎসারিত হয়েছে প্রাচ্যধারার ধ্যানপদ্ধতি থেকে।
ইউনাইটেড হসপিটালের মনোরোগ বিভাগের কনসালট্যান্ট জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ নিয়ে যখন একজন মানুষ ধ্যানমগ্ন হন বা মেডিটেশন করেন, তাঁর স্ট্রেসের মাত্রা কমে যায় ৬০ ভাগ।
গবেষণার তথ্য, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির হার অন্তত ৮৭ ভাগ কমে গেছে, যখন তাঁরা মেডিটেশন করেছেন। ৯১ ভাগ মানুষই মেডিটেশন করে বাদ দিতে পেরেছেন ঘুমের ওষুধ বা স্লিপিং পিল খাওয়া। কোনো ওষুধ বা প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতিতে এমন সাফল্য কখনো দেখা যায়নি। এই ধ্যান বা মেডিটেশন হলো দম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজের মনের ভেতর ডুব দেওয়া, ইতিবাচক বিষয় নিয়ে ভাবা, সুখ বা সাফল্যের কথা চিন্তা করা। মেডিটেশনের মাধ্যমে সাফল্য, প্রশান্তি ও নিরাময় লাভ করেছেন লাখ লাখ মানুষ।