বিশ্বে দেশের পতাকা ওড়াবেন তরুণেরা

মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাত
মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাত

২০১৬ সালে রিও অলিম্পিক আসর শুরুর আগে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। বিশ্বব্যাপী একটা খবর হয়ে দাঁড়ায় বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ বাংলাদেশ কিন্তু একটা অলিম্পিক পদকও নেই! ক্রীড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্রর একটা অভিজ্ঞতা জানতে পারি। বিশ্বের নামকরা একটি ইংরেজি পত্রিকার একজন সাংবাদিক মিডিয়া ভিলেজে তাঁকে ডেকে নিয়েছিলেন শুধু এই কারণে, ১৬ কোটির বেশি মানুষ নিয়েও বাংলাদেশ যে অলিম্পিকে ‘অংশগ্রহণই বড় কথা’–এর মন্ত্রে এখনো উজ্জীবিত, তা নিয়ে তিনি লিখতে চান। উৎপল শুভ্র বলেছেন, ‘সেদিন লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে এসেছিল।’ বিশ্বের নামকরা অনেক পত্রপত্রিকা বাংলাদেশকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব দেখে অলিম্পিক দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। খুব অবাক হই আসলেই তো, আমাদের ১৬ কোটি মানুষ থেকে একজন মানুষও একটা অলিম্পিক পদক নিয়ে আসতে পারল না!

মনে মনে অনেক বিষয় এবং অজুহাত খোঁজার চিন্তা করা শুরু করলাম, মনে হয় আমাদের সম্পদ নেই, সুযোগ-সুবিধার অভাব আছে এ জন্য হচ্ছে না। আবার অন্যদিকে ভাবতে লাগলাম ওই যে আফ্রিকার দেশগুলো যাদের সম্পদ এবং সুযোগ-সুবিধা আমাদের চেয়েও অনেক কম, তারা তো প্রতি আসরেই সেরা সেরা পদকগুলো জিতে চলেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও কতগুলো পদক জিতল। আমাদের জনতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য তো প্রায় ভারতের মতোই।

একজন ট্রায়াথলেট (সাঁতার, সাইকেল চালনা ও দৌড়ে বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন) হিসেবে একটা চমৎকার ট্রায়াথলনের খবর শেয়ার করি। বিগত টোকিও অলিম্পিকে মেয়েদের ট্রায়াথলনে সোনা জিতেছেন বারমুডা থেকে ফ্লোরা ডাফি। মাত্র ৬৪ হাজার জনসংখ্যার দেশ। দেশটির প্রথম অলিম্পিক পদক। আর এটির জন্য দেশটি অপেক্ষা করেছে ৮৫ বছর। আসলে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে ব্যাপারটা শেয়ার করছি না। শেয়ার করছি আমাদের নিজেদের জয়ের চেষ্টাটা অর্থাৎ নিজের সেরাটি বের করে আনার মনোবলের কথা। নিজের সীমানকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। নিজের সীমানা পার হতে হতে আমরা সেরা ফল পাব শিগগিরই।

বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালের অলিম্পিক আসর থেকে খেলে আসছে। কিন্তু কোনো পদক জিততে পারিনি। তার মানে আমাদের দেশে ট্যালেন্ট নেই যে এটা আমি বিশ্বাস করি না। জনসংখ্যাকে আমি পদক জয়ের বড় কারণ হিসেবে চিন্তা করছি না। আমরা ১০ বার অলিম্পিকে অংশ নিয়ে একটা পদক না পাওয়াটা অনেক কষ্টের। আমাদের ট্যালেন্ট আছে আমরা জানি। জাতি হিসেবে আমাদের গৌরবময় ইতিহাস আছে। কিন্তু কোনো একটা জায়গায় আমাদের ব্যাটে–বলে মিলছে না। আমরা এখনো অলিম্পিক পদক জয় থেকে অনেক দূরে। আমাদের অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক অগ্রসর হয়েছে। বাংলাদেশের জিডিপি এখন বিশ্বের শীর্ষ ৪০টির একটি। প্রতিবছর অর্থনীতির চাকা এগিয়ে চলেছে দেশের কোটি মানুষের কঠোর পরিশ্রমে। কিন্তু দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি আমাদের ক্রীড়ামনস্কের সংস্কৃতি এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। বিগত পাঁচ বছর আগে যে স্বপ্নটা দেখেছি, তার চেয়ে বেশি এগিয়েছি। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে ইচ্ছাশক্তির কোনো কমতি নেই। আমরা নদীমাতৃক দেশের মানুষ। আমরা সাঁতারে অনেক ভালো করার কথা। আমরা ইতিমধ্যে বাংলা চ্যানেল সাঁতারকে আন্তর্জাতিক একটা সুইমিং রুটে পরিণত করতে পেরেছি। আমরা দেখতে পাই বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ভারতে প্রধানমন্ত্রীর অ্যাডভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন ভারতের ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী সাঁতারু রিটু কেডিয়া। আমাদের দেশেও পেশাদার–অপেশাদার বিভিন্ন পেশার রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষ বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু কোনো ধরনের স্বীকৃতি সরকারের পক্ষ থেকে আসেনি। আমাদের দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আসলে সরকারের বিশেষ পরিকল্পনা ছাড়া সম্ভব নয়। অলিম্পিকে পদক পাওয়া আমাদের জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র, যদি আমরা একসঙ্গে যারা ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত আছি, সবাই চেষ্টা করি। আগামী ১০ বছর পর আমি বাংলাদেশকে অলিম্পিক পদক জয়ী হিসেবে দেখতে চাই। দেখতে চাই এই দেশে আয়রনম্যান ট্রায়াথলন ইভেন্ট হচ্ছে। আমি দেখতে চাই শত শত তরুণ আন্তর্জাতিক খেলাধুলায় বাংলাদেশের পতাকা ওড়াচ্ছেন।