বিশ্বে করোনা পরীক্ষার দিক থেকে বাংলাদেশ তলানিতে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী এক লাখের বেশি রয়েছে, বিশ্বে এমন দেশের সংখ্যা বাংলাদেশসহ এখন ১৮টি। এসব দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম পরীক্ষার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশের চেয়ে কম পরীক্ষা হচ্ছে শুধু মেক্সিকোতে। অন্যদিকে বিশ্বের ২১৫টি দেশের মধ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে পরীক্ষার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৫তম।

অথচ পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণ শনাক্তের হার বাংলাদেশে বেশি। গড় শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। লাখের বেশি রোগী রয়েছে, এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে শুধু ব্রাজিল ও মেক্সিকোতে পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার বেশি।

পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার শুরু থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, শীর্ষ আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা হচ্ছে রাশিয়াতে। দেশটিতে প্রতি ১০ লাখে ১ লাখ ১৩ হাজার ৭৫১ জনের পরীক্ষা হচ্ছে। এরপর যুক্তরাজ্য ও স্পেনেও প্রতি ১০ লাখে ১ লাখের বেশি ব্যক্তির করোনা শনাক্তের পরীক্ষা হচ্ছে।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখে ৩ হাজার ৬৪২ জনের করোনার পরীক্ষা করা হচ্ছে, যা লাখের বেশি আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন তালিকায় দ্বিতীয়।

গতকাল শনিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৭৭৫ জন। সংক্রমণ বৃদ্ধির এই সময়ে বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষার সংখ্যা এবং আওতা আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।

একটি দেশে যে পরিমাণ পরীক্ষা করা হচ্ছে, তা প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যার অনুপাতে কত, সেটির হিসাবও রয়েছে ওয়ার্ল্ডোমিটারে। জনসংখ্যার অনুপাতে পরীক্ষার হিসাবে ২১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৫তম। তালিকার ১৪৩ ও ১৪৪তম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে সেনেগাল ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক। জনসংখ্যা অনুপাতে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা হচ্ছে মোনাকো, জিব্রাল্টার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কেইম্যান আইল্যান্ড, বাহরাইন, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা ও আইসল্যান্ডে।

>

এক লাখের বেশি রোগী রয়েছে, এমন দেশগুলোর মধ্যে পরীক্ষার দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে শুধু মেক্সিকো।

জনসংখ্যা অনুপাতে পরীক্ষার দিক থেকে ভারতের অবস্থান ১৩৮, পাকিস্তান ১৩৯ এবং শ্রীলঙ্কার অবস্থান ১৪২তম। দক্ষিণ এশিয়ায় বেশি পরীক্ষা হচ্ছে মালদ্বীপে। আবার লাখের বেশি আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে নমুনা পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণ শনাক্তের হার বেশি ব্রাজিলে। দেশটিতে গড়ে শনাক্তের হার ৪৩ শতাংশ। এরপর মেক্সিকোতে গড়ে শনাক্ত হয়েছে সাড়ে ৩৬ শতাংশ। বাংলাদেশে গড়ে শনাক্ত ১৮ দশমিক ১ শতাংশ।

বর্তমানে দেশের ৬১টি কেন্দ্রে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণের পরীক্ষা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৩১টি এবং ঢাকার বাইরে ৩০টি। নানা জটিলতায় একেক সময় একেক কেন্দ্রে পরীক্ষা বন্ধ থাকাতে দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কম-বেশি হচ্ছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে কারিগরি জটিলতার কারণে গত দুই দিন কেন্দ্রটিতে পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ময়মনসিংহ বিভাগের আরেক কেন্দ্র জামালপুরের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে গত ২৭ মে থেকে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।

সরকার গঠিত করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি মোহাম্মদ সহিদুল্লা প্রথম আলোকে বলেন, এখন সংক্রমণ বেশি, পরীক্ষার প্রয়োজনও বেশি। জোন চিহ্নিত করে লকডাউন কার্যকর করতে এবং সংক্রমণ ঠেকাতে রোগী শনাক্ত করা জরুরি। তিনি বলেন, প্রশিক্ষিত লোকবল ও অন্যান্য সুবিধা থাকলে বর্তমান কেন্দ্রগুলোতে দিনে ৩০ হাজার পরীক্ষা করা সম্ভব।