প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুজিব শতবর্ষ উদ্যাপনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের নানা দিক আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর ফলে বিশ্ববাসী নতুন করে বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ ও বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন সম্পর্কে জানতে পারবে।
আজ বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সাংসদ এ কে এম রহমতুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিবার্ষিক অ্যানিভার্সারি প্রোগ্রামের আওতায় ইউনেসকো কোনো বিশেষ ঘটনার বা বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্মের ৫০তম বা তদূর্ধ্ব অর্থাৎ ৭৫তম বা ১০০তম বা ১৫০তম বার্ষিকী উদ্যাপন করে থাকে। এই প্রোগ্রামের আওতায় ২০২০-২১ সালের জন্য ইউনেসকোর গ্রহণ করা ৫৯টি অ্যানিভার্সারি উদ্যাপনের প্রস্তাবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয়, বরং সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক হিসেবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে ইউনেসকো উদ্যোগী হয়। ইউনেসকোর ম্যান্ডেটভুক্ত বিভিন্ন বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর অনন্যসাধারণ অবদান এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়েছে; বিশেষ করে স্কুলজীবন থেকে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সচেতনতা ও পরবর্তী সময়ে শিক্ষা বিস্তারে বিভিন্ন কার্যক্রম, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর পরিকল্পনা এবং সর্বোপরি ভাষার অধিকারসহ বাঙালির সব অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধুর অবিচল সংগ্রাম ও ত্যাগের বিষয়গুলো ইউনেসকো বিশেষভাবে বিবেচনা করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ইউনেসকো বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় এই আয়োজন আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করল এবং অনন্য মাত্রায় উন্নীত হলো। ইউনেসকোর তত্ত্বাবধানে এখন সারা বিশ্ব নানা আয়োজনে জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন করবে। এর ফলে বঙ্গবন্ধুর সুদীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস এবং বাঙালি জাতির ও বাংলাদেশের জনগণের জন্য তাঁর আত্মত্যাগ বিশ্ববাসীর কাছে আরও বড় পরিসরে প্রকাশিত হবে।
সম্পূরক প্রশ্নে তরিকত ফেডারেশনের সাংসদ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, বিএনপি-জামায়াত বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে না। বরং ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করে। এমন কোনো আইন করা হবে কি না, যাতে মুজিব শতবর্ষ পালনে বাধ্য হবে বা পালন না করলেও যেন চুপ থাকে।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিথ্যা দিয়ে সত্যকে মুছে ফেলা যায় না। সেটা প্রমাণিত সত্য। সত্য বলেই জাতির জনকের সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে, মুক্তির সংগ্রামে, বিজয়ের ইতিহাসে জাতির জনকের যে অবদান, তা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। আজকে সে ইতিহাস উদ্ভাসিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আজকে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ইউনেসকোর মাধ্যমে বিশ্বের সকল দেশ, জাতিসংঘভুক্ত সকল দেশে উদ্যাপন করছে। এর থেকে বড় সত্য কি আছে? কাজেই কে মানল, কে মানল না, তার জন্য বাঙালি জাতি বসে থাকেনি, থাকবে না।’
সরকারি দলের সাংসদ আব্দুস সালাম মুর্শিদীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ব্যক্তি পর্যায়সহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে মুজিব শতবর্ষে অসংখ্য প্রস্তাব পাওয়া গেলেও বাস্তবায়নের সুবিধার্থে ২৯৮টি কর্মসূচিতে সীমিত রাখা হয়েছে। এই কর্মপরিকল্পনায় ঠাঁই না পাওয়া কোনো কর্মসূচি প্রস্তাবকারীরা নিজ উদ্যোগে বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
সরকারি দলের সাংসদ শহীদুজ্জামান সরকারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের পর এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল যে জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন তা দূরের কথা, আওয়ামী লীগ বোধ হয় জীবনে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর নামটিও আসবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সৌভাগ্য যে এই ২০২০ সালে সরকারে আছি আর এ জন্য জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনে সুযোগ পেয়েছি। এটা করতে পারার থেকে আর সৌভাগ্যের কিছু হতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণ এই সুযোগ দিয়েছে। আমি ও আমার ছোট বোন রেহানার জন্য কত সৌভাগ্যের বিষয়। এটা করে যেতে পারা যে কত বড় পাওয়া, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’
জাতীয় পার্টির সাংসদ ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি কী পেয়েছেন কী পাননি, সে হিসাব মেলান না। তিনি একটি আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে চলেন—জাতির জনকের অবদান যেন বৃথা না যায়, স্বাধীনতার জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের জীবন যেন বৃথা না যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে মানুষের জন্য আমার পিতা জীবন দিয়ে গেছেন, তাদের জন্য কতটুকু করতে পেরেছি, সেই হিসাবটা আমি করি। আমার আমিত্ব বলে এখানে কিছু নেই।’
চার কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা
সরকারি দলের সাংসদ শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের জীবন–জীবিকা বিপন্ন হচ্ছে। দেশজ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা গত মে মাসে ১ ডিগ্রি ও নভেম্বর মাসে শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের লোনাপানি দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত নদীতে প্রবেশ করছে। গড় বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বল্প সময়ে বেশি বৃষ্টিপাত শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় এখন আগের মতো বিভিন্ন ঋতুতে তেমন তারতম্য পরিলক্ষিত হয় না। এর ফলে জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব পড়ছে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ১৯টি জেলার ৭০টি উপজেলার প্রায় চার কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।