বগুড়ায় বিলের পানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২৪০ বস্তা অচল টাকা ফেলা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ভাগাড়ের বদলে বিলের পানিতে এসব টাকার বর্জ্য ফেলায়
বগুড়া পৌরসভার দায়িত্বজ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
বগুড়া পৌরসভা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২৪০ বস্তা টাকার বর্জ্য সংগ্রহ করে তা ট্রাকে করে শাজাহানপুর উপজেলার উন্মুক্ত খাউড়ার বিলের পানিতে ফেলে। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়, বিলের পানিতে ফেলা এসব টাকা আসলে অচল মুদ্রা।
গত মঙ্গলবার শাজাহানপুরের খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের জালশুকা এলাকার খাউড়ার বিলের পানিতে বিপুল পরিমাণ কুচি কুচি টাকা পড়ে থাকতে দেখে সেখানে কৌতূহলী মানুষের ঢল নামে। এসব টাকার উৎস নিয়ে গুঞ্জন ও জল্পনাকল্পনা শুরু হয়। খবর পেয়ে ছুটে আসেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সংবাদমাধ্যমগুলোও এ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এগুলো অচল মুদ্রা বলে জানানোর পর কৌতূহলের অবসান হয়। তবে বিলের পানিতে পুরোনো টাকার নোট ফেলা পরিবেশসম্মত কি না, তা নিয়ে গতকাল বুধবার দিনভর নানা আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, টাকার নোট মুদ্রণের কাজে নানা রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। নোটের কাগজও সাধারণ কাগজ নয়। আবার এসব নোট হাতবদলের সময় অনেক জীবাণু ও ময়লাও লেগে যায়। অচল নোট পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস না করে এভাবে যেখানে–সেখানে ফেলে পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে। বিলের পানিতে এসব অচল নোট ফেলে দিয়ে বগুড়া পৌরসভা চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।
তবে বগুড়া পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমান বলেন, অচল টাকাগুলো ভাগাড়ে ফেলার কথা। তিন ট্রাক টাকার মধ্যে দুই ট্রাক ঠিকই ফেলা হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার ভাড়া করা ট্রাকটি অচল টাকার বর্জ্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গ্রহণ করার পর তা শাজাহানপুর উপজেলায় বিলের পানিতে ফেলেছে। এটি তাঁর অজ্ঞাতসারে হয়েছে। ভবিষ্যতে পৌরসভা অচল টাকার বর্জ্য ফেলার ব্যাপারে আরও সতর্ক হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. আশরাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, অচল টাকা পানিতে ফেলায় মুদ্রণের রাসায়নিক উপাদান পানির সঙ্গে মিশে যাবে। এতে পানি দূষিত হবে। আবার টাকার মধ্যে একধরনের প্লাস্টিক থাকে। এই প্লাস্টিক যেখানে–সেখানে ফেললে পরিবেশ দূষিত হবে। আবার পোড়ালেও তা ৮০০ থেকে ১ হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় পোড়াতে হবে। এ রকম তাপমাত্রায় পোড়ালে পরিবেশের ক্ষতি হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক অচল টাকা ধ্বংস করার ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো পরামর্শ চায়নি। টাকার বর্জ্য দুই পদ্ধতিতে ধ্বংস করা যেতে পারে। একটা হলো এক হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপে পোড়ানো। আর একটি হলো ফেলনা কাগজের মতো কোনো শিল্পকারখানার সঙ্গে চুক্তি করে পুনর্ব্যবহার করা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক জগন্নাথ চন্দ্র ঘোষ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ১ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাতিল নোট পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট কুচি কুচি করে কেটে ফেলে দেওয়ার নিয়ম। বগুড়া কার্যালয়ে কুচি করা আরও ১ হাজার ৬০০ বস্তা অচল টাকার বর্জ্য জমা রয়েছে। পৌরসভার সহযোগিতায় এসব অচল টাকার বর্জ্য ভাগাড়ে ফেলা হবে। বিলের পানিতে এসব টাকা ফেলে পৌরসভা কোনো ভুল করেনি বলেও তিনি দাবি করেন।
এভাবে অচল মুদ্রা বিলের পানিতে ফেলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অচল টাকা পানিতে ফেলে দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। এই টাকাগুলো কীভাবে নষ্ট করা হবে, তার সুনির্দিষ্ট একটি নীতিমালা রয়েছে।
পৌরসভার তিন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শাও: এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অচল টাকা বিলে ফেলে হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটানোয় দায়িত্ব পালনে গাফিলতির দায়ে বগুড়া পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তিন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। গতকাল সকালে বগুড়া পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমান এ–সংক্রান্ত আদেশে স্বাক্ষর করেন। ওই তিন কর্মকর্তা হলেন পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক মামুনুর রশিদ, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা রাখিউল আবেদীন।