যশোরের বেনাপোল থেকে ঢাকা পথে আন্তনগর বিরতিহীন ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ বুধবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা সাড়ে ১১টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ট্রেনটি উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। বেলা সোয়া ১টায় ট্রেনটি বেনাপোল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
এ উপলক্ষে বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। প্ল্যাটফর্মের ওপরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঝিকরগাছার গদখালী এলাকার হরেক রকম ফুলে গোটা ট্রেন নান্দনিক সাজে সাজানো হয়েছে। বেনাপোল থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ। সেখানে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান, যশোরের তিন সাংসদ কাজী নাবিল আহমেদ, শেখ আফিল উদ্দীন ও মো. নাসির উদ্দীন।
প্রস্তুতির ব্যাপারে জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শহিদুল ইসলাম বলেন, গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। তা ছাড়া ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনের সেবা রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। সেটাও তিনি উদ্বোধন করবেন। এ জন্য বেনাপোল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন গণভবনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত থাকবে। যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে বেনাপোল থেকে ঢাকা পর্যন্ত শোভন চেয়ারের টিকিটের মূল্য ৪৮৫, এসি (শীতাতপনিয়ন্ত্রিত) চেয়ার ৯৩২, এসি সিট ১ হাজার ১১৬ ও এসি কেবিন ১ হাজার ৬৭৪ টাকা। এর সঙ্গে বিরতিহীন সুবিধার জন্য ১০ শতাংশ অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা তিনটা থেকে বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন ও যশোর রেলওয়ে জংশন থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে।
বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশনমাস্টার মো. সাইদুজ্জামান বলেন, গতকাল প্রথম পাঁচ ঘণ্টায় এই স্টেশন থেকে শোভন চেয়ারের ১৪টি ও এসি চেয়ারের ১৮টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। প্রথম দিনের জন্য এসি কেবিন সংরক্ষিত রয়েছে। এক দিন পর থেকে ওই টিকিটও বিক্রি করা হবে। এ ছাড়া অনলাইনের এই ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে ২২ জুলাই থেকে।
এই ট্রেনে যাত্রীদের জন্য দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। রেলওয়ে থেকে যাত্রীদের সেবার জন্য ‘রেলওয়ে ক্যাটারিং সার্ভিস’ নামে নতুন একটি সেবা চালু করা হয়েছে। সুলভ মূল্যে ট্রেনের ভেতরে ভালো মানের খাবার সরবরাহ করা হবে। প্রথম দিন থেকেই এ সেবা চালু থাকছে। এটি কারও জন্য বাধ্যতামূলক নয়। কেউ ইচ্ছা করলে না নিতেও পারেন। পর্যটন করপোরেশন থেকে এই খাবার এনে ট্রেনের ভেতরে সরবরাহ করা হবে।
৮৯৬টি আসনের এই ট্রেন প্রতিদিন বেলা সোয়া একটায় যশোরের বেনাপোল রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যাবে। যশোর রেলওয়ে জংশনে পৌঁছে ১৫ মিনিটের বিরতি নেবে। সেখানে যাত্রী ওঠানোর পাশাপাশি রেলের ইঞ্জিন ঢাকামুখী ঘোরানো হবে। এরপর ঈশ্বরদী গিয়ে ট্রেনের চালকসহ অন্যান্য কর্মী বদলের জন্য আরও ১৫ মিনিটের বিরতি থাকবে। পরে ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে শেষ গন্তব্যে ছেড়ে যাবে। তবে তার আগে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রী নামানোর জন্য কিছুক্ষণ ট্রেনটি থামানো হবে।
দেশের বৃহত্তর স্থলবন্দর বেনাপোল তল্লাশিচৌকি দিয়ে পাসপোর্টের মাধ্যমে প্রতিদিন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৭ থেকে ৮ হাজার মানুষ চলাচল করে। বেনাপোল থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়ার জন্য সরাসরি কোনো ট্রেন সেবা চালু নেই। এতে ভারতগামী যাত্রীদের ঢাকায় পৌঁছাতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। একমাত্র সড়কপথে বাসের ওপর নির্ভর করে তাদের চলাচল করতে হয়। ভারত থেকে আসা যাত্রীদের ভারী ব্যাগ নিয়ে বেশির ভাগ সময় বাসের টিকিট নেওয়ার সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। এই সমস্যার নিরসন হচ্ছে। আধুনিক এই ট্রেনের বগি ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছে। এ ট্রেনে বিমানের মতো বায়ো-টয়লেট সুবিধা রয়েছে। আসনগুলোও আধুনিক। প্রতিদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা থেকে ট্রেনটি বেনাপোলের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে।
বর্তমানে যশোর থেকে ঢাকায় যে ট্রেন সেবা চালু রয়েছে, সেটি ১৪টি স্থানে বিরতি নেয়। এতে যশোর থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা লেগে যায়। সেখানে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি সময় নেবে সাত ঘণ্টা। আর যশোর থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে বেনাপোলে পৌঁছে যাবে।