হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ড্যাশ-৮ মডেলের একটি উড়োজাহাজ জরুরি অবতরণ করেছে। আজ সোমবার সকাল আটটার দিকে ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী ওই ফ্লাইট জরুরি অবতরণ করে। তবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ (জনসংযোগ) এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, বিমানটিতে ৭০ জন যাত্রী ছিলেন। সবাই সুস্থ আছেন। ড্যাশ-৮ মডেলের উড়োজাহাজটি সকাল আটটার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর এতে যান্ত্রিক ত্রুটির আশঙ্কা করেন পাইলট। তিনি উড়োজাহাজটির ঘুরিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
সকাল সোয়া ১০টার দিকে শাকিল মেরাজ জানান, পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে আধা ঘণ্টার মধ্যে উড়োজাহাজটি আবার উড্ডয়ন করবে। ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার যাবে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সূত্রে জানা গেছে, উড়োজাহাজটি সকাল আটটার দিকে ঢাকা ছেড়ে যায়। এ সময় উড়োজাহাজ থেকে একটা শব্দ পাওয়া যায়। পাইলট ভেবেছিলেন সামনের চাকা ফেটে গেছে। বিমানটি প্রথমে ঢাকা ছেড়ে প্রায় চট্টগ্রামের দিকে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার ঢাকার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসেন পাইলট। সাড়ে আটটার দিকে এটি শাহজালাল বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। পরে দেখা গেছে, বিমানটির চাকা ফেটে যায়নি। উড়োজাহাজের ককপিটের সামনের অংশে একটি পাখি আঘাত করেছিল। ককপিটের সামনে কিছুটা রক্ত লেগে থাকতে দেখা গেছে। উড়োজাহাজটিতে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না। কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আবার ফ্লাইটটি ঢাকা ছেড়ে যাবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিমানটি জরুরি অবতরণ করেছে ঠিকই। তবে রানওয়েতে বিমান ওঠানামা বন্ধ ছিল না। স্বাভাবিকই ছিল।
কানাডার বোমবারডিয়ার কোম্পানির তৈরি ড্যাশ-৮ মডেলের উড়োজাহাজের ভাগ্য এ দেশে খুব একটা ভালো নয়। বিশ্বব্যাপী ছোট এয়ারক্রাফট হিসেবে ড্যাশ-৮-এর খ্যাতি থাকলেও বাংলাদেশে প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে এই মডেলের উড়োজাহাজ। সর্বশেষ গত ৮ মে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ বিমানের এই মডেলের একটি বিমান ছিটকে পড়ে রানওয়েতে। প্রাণে বেঁচে যান বিমানের ৩৩ জন আরোহী। তবে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ১৪ জন। এর আগে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর ড্যাশ-৮ মডেলের উড়োজাহাজ নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের ৫ ক্রুসহ ৭১ জন আরোহীর একটি ফ্লাইট অলৌকিকভাবে বেঁচে যায়। ওই দিন সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয় বিমানের ফ্লাইটটি। উড্ডয়নের পর ছয় হাজার ফুট ওপরে উঠলে ড্যাশের একটি চাকা খুলে যায়। পরে চাকা খোলা অবস্থায় বিমানটি ঢাকার দিকে রওনা হয়। পাইলট ও ফার্স্ট অফিসারের দক্ষতায় সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান যাত্রীরা। এ ছাড়া এ বছরের ৩১ মার্চ ড্যাশ-৮-এর একটি বিমান সিলেট থেকে ঢাকায় রওনা দেয়। কিছুক্ষণ পরই চাকায় ত্রুটি টের পান পাইলট। বিকেল চারটার দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করেন তিনি।
ইয়াঙ্গুনের দুর্ঘটনার আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে ড্যাশ-৮ মডেলের তিনটি উড়োজাহাজ ছিল। ওই দুর্ঘটনার পর বিমানবহরে দুটি ড্যাশ-৮ আছে। কিছুদিনের মধ্যে আরও তিনটি উড়োজাহাজ যুক্ত হবে বিমানের বহরে।