১৯৭৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবায় তিস্তা নদীর ওপর ব্যারাজ নির্মাণ শুরু করে ভারত। মূল লক্ষ্য ছিল তিন পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের ছয়টি জেলার প্রায় ৯ দশমিক ২২ লাখ হেক্টর জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা।
গজলডোবায় পানি আটকিয়ে সেই পানি প্রথমে মহানন্দায় নেওয়া হচ্ছে। মহানন্দায় নেওয়ার পর ফুলবাড়ীতে মহানন্দা ব্যারাজ (জলপাইগুড়ি) তৈরি করে পানি সেচের জন্য নেওয়া হয়। এরপর চোপড়াতে মহানন্দা খালের ওপর ডাউক ব্যারাজ (উত্তর দিনাজপুর) এবং এরপর ভাটিতে বাংলাদেশ সীমান্তে টাঙ্গন ব্যারাজ (দক্ষিণ দিনাজপুর) তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল। ডাউক ব্যারাজ তৈরি হলেও টাঙ্গন ব্যারাজ তৈরি হয়নি।
অর্থাভাব, জমি অধিগ্রহণ সমস্যাসহ নানা কারণে তিন দশকেও তিস্তা প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ তাদের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৪ শতাংশ জমিতে সেচ দিতে পেরেছে (একটি সূত্র বলেছে, এটি ৫ শতাংশ মাত্র)। এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে।
পাহাড় এলাকায় বন উচ্ছেদ, কৃষিজমির প্রসার, বসতি স্থাপন ও বড় বড় রাস্তা তৈরির কারণে ভূমিধস বাড়ছে, ফলে তিস্তা নদীতে এসে জমছে প্রচুর পলি, বালু ও কাঁকর। তিস্তা বছরে ৬০ লাখ টন পলি, কাঁকর, পাথর বহন করে আনে, এর ৭২ শতাংশ আসে বর্ষাকালে। যে নদীর স্রোতে এত বিপুল পরিমাণ কাঁকর, বালু, পাথর ভেসে আসে, সেই নদীতে নির্মিত জলাধার বা বাঁধের আয়ুষ্কাল স্বভাবতই কম হবে। একসময় বিপন্ন হতে পারে তিস্তা ব্যারাজ।
সূত্র: বাংলার নদীকথা, লেখক: কল্যাণ রুদ্র
(নদী বিশেষজ্ঞ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিস্তাসংক্রান্ত কমিটির প্রধান)