চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আটজন বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনই বিদায়ী মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। আর একজন সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী।
বাকি দুজন এই দুজনের কারও অনুসারী নন। স্থানীয় সাংসদের সঙ্গে তাঁদের সুসম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে।
এবারের নির্বাচনে জয়ী বিদ্রোহী প্রার্থীদের তিনজন আগেরবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর ছিলেন। তাঁরা এবার দলের সমর্থন পাননি। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের রাজনীতি দুটি ধারায় বিভক্ত। একটি ধারা সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী এবং অন্যটি আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যাওয়ার পর তাঁর অনুসারীরা ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
গতকাল বুধবারের নির্বাচনে জয়ী হওয়া বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা হলেন জালালাবাদ ওয়ার্ডের সাহেদ ইকবাল, চান্দগাঁও ওয়ার্ডের এসরারুল হক, উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের জহুরুল আলম, ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ডের হাসান মুরাদ ও ১ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ফেরদৌস বেগম। অন্য তিনি জয়ী বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের শফিকুল ইসলাম মহিবুল হাসানের অনুসারী বলে পরিচিত। উত্তর হালিশহরে মো. ইলিয়াছ ও গোসাইলডাঙা ওয়ার্ডের মোর্শেদ আলী এই দুই ধারার বাইরে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ৪১টি সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এবারের নির্বাচনে ৩২টি সাধারণ ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগের এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। বিদ্রোহীদের মধ্যে আ জ ম নাছির উদ্দীন ও মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারীরা ছিলেন। এ ছাড়া স্থানীয় সাংসদের কয়েক সমর্থকও নির্বাচন করেছেন।
এবারের নির্বাচনে আগের নির্বাচনে বিজয়ী কাউন্সিলরদের মধ্যে ১৭ জনকে সমর্থন দেয়নি। তাঁদের ১২ জন নির্বাচন করেছেন। জয়ী হয়েছেন ৩ জন। এবারের সব ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জিতেছেন। বিএনপি-জামায়াতের কেউ জয়ী হননি।
নগরের ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে হারিয়ে জয়ী হন সদ্য বিদায়ী কাউন্সিলর ও বিদ্রোহী প্রার্থী হাসান মুরাদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে হারানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এলাকাবাসীর ভালোবাসা ও ভোটে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। গত পাঁচ বছর মানুষের জন্য কাজ করেছেন। মহামারি করোনার সময়ও ঘরে বসে থাকেননি। মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন। তাঁর প্রতিদান পেয়েছেন। ভবিষ্যতেও মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন।
আ জ ম নাছির উদ্দীনের আরেক অনুসারী সাহেদ ইকবাল বলেন, জয়ী হতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। তবে এই জয়ে আনন্দ আছে। অনেক নোংরামি হয়েছে। মানুষ তার উত্তর দিয়েছেন। এখন এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, মানুষ কার পক্ষে আছে।
মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে বিজয়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি দুবারের কাউন্সিলর ছিলেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর শিষ্য। এলাকার মানুষ মহিউদ্দিন চৌধুরীর শিষ্য হিসেবে তাঁকে জয়ী করেছেন। এখন মানুষের জন্য কাজ করবেন।