পিডিবি বিদ্যুতের দাম ৬৬-৭৯% বাড়াতে চায়। ‘দায়সারা’ হওয়ায় ফেরত পাঠিয়ে নতুন প্রস্তাব দিতে বলেছে বিইআরসি।
করোনার কারণে একদিকে মানুষের আয় কমেছে, অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ও পরিবহনভাড়া বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষকে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এর আগে গ্যাসের দামও বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। গত সপ্তাহের শেষ দিকে তাদের প্রস্তাব বিইআরসিতে জমা দেওয়া হয়। এতে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে ৬৬ থেকে ৭৯ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানোর কথা বলা হয়। পাইকারিতে দাম বাড়লে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ে।
এর আগে এ মাসেই ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গ্যাসের দাম ব্যাপকভাবে বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। তাদের প্রস্তাবে আবাসিকে দুই চুলায় গ্যাসের বিল মাসে ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ১০০ টাকা ও এক চুলায় ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়। বিইআরসি ‘দায়সারা’ সেই প্রস্তাব আমলে নেয়নি। নতুন করে বিধি মেনে প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছিল।
বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় নথি না থাকায় নতুন করে প্রস্তাব জমা দিতে বলেছে বিইআরসি। সংস্থাটির সূত্র বলছে, দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের দুটি আলাদা প্রবিধান মালা আছে। সেই প্রবিধান মালা মেনে আবেদন করতে হয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি লঙ্ঘন করা মানে হলো আইন লঙ্ঘন করা। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ছাড়া লোকসানের পূর্বানুমান থেকে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
দায়সারা প্রস্তাব জমা দেওয়ার প্রবণতা নিয়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল প্রথম আলোকে বলেন, পিডিবির প্রস্তাবটি অসম্পূর্ণ ছিল। ত্রুটিযুক্ত আবেদন জমা দেওয়ায় তাদের নতুন করে আবেদন করতে বলা হয়েছে।
পিডিবি যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তাতে দাবি করা হয়েছে, বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ গড়ে ৫ টাকা ১৭ পয়সায় বিক্রি করে তারা। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করায় গত অর্থবছরে (২০২০-২১) ১১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে তাদের। উৎপাদন ব্যয় এখন ইউনিটপ্রতি গড়ে ৮ টাকা ৫৮ পয়সা। এ হিসেবে ৬৬ শতাংশ দাম বাড়াতে হবে।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়টি উল্লেখ করে পিডিবি বলেছে, গ্যাসের দাম শতভাগ বাড়ালে পাইকারি বিদ্যুতের দাম ৭৭ শতাংশ বাড়াতে হবে। আর গ্যাসের দাম পেট্রোবাংলার প্রস্তাব অনুসারে ১২৫ শতাংশ বাড়ানো হলে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে ৭৯ শতাংশ। না হলে এ বছর পিডিবির প্রায় ৩০ হাজার ২৫২ কোটি টাকা ক্ষতি হবে বলে ধারণা করছে সংস্থাটি। পিডিবি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, ফার্নেস অয়েলে আমদানি শুল্ক, কয়লার ওপর ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপের যুক্তি তুলে ধরেছে। আরও বলেছে, বিশ্ববাজারে কয়লার দামও বেড়েছে।
পিডিবির চেয়ারম্যান মো. বেলায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নতুন বছরের সম্ভাব্য লোকসান হিসাব করেই দাম বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।
দেশে গত ১১ বছরে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ে পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ বেড়েছে বিদ্যুতে দাম। অভিযোগ আছে, অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বসিয়ে বসিয়ে ‘ক্যাপাসিটি পেমেন্ট’ দিতে হয়। এতে বিপুল ভর্তুকি দিতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ) ২০২০ সালে এক প্রতিবেদনে জানায়, দেশে ৫৭ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রেখে কেন্দ্রভাড়া দেওয়া হয়। এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগের অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা।