করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইতালিতে অন্তত চারজন বাংলাদেশি মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে মারা যাওয়া মধ্যবয়সী ওই ব্যক্তি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইতালির নাগরিক।
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চীনের উহান শহরে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর বিদেশে থাকা নাগরিকেরাও এতে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ঠিক কত, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। তবে বিদেশে বাংলাদেশের কয়েকটি দূতাবাস ও ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ মুহূর্তে বিদেশে থাকা বাংলাদেশের অন্তত ৬৫ জন নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা আজ সোমবার এই প্রতিবেদককে জানান, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ইতালি ছাড়া অন্যদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার তথ্য জানানোর বিষয়ে বিধিনিষেধ আছে। তাই চাইলেই ইউরোপের দেশ থেকে আক্রান্ত বাংলাদেশিদের বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গত সপ্তাহে ম্যানচেস্টারে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তির মৃত্যুর প্রসঙ্গটি টানেন। তিনি জানান, মারা যাওয়া ব্যক্তিটি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে ছিলেন। এ বিষয়ে ম্যানচেস্টারে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের কাছে কোনো তথ্য ছিল না। ওই ব্যক্তির পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে বাংলাদেশ উপহাইকমিশন করোনাভাইরাসে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরেছে।
যুক্তরাজ্য, ইতালি ও স্পেনে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ইউরোপের দেশগুলো তাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার তথ্য জানানোর বিষয়ে কড়াকড়ি মেনে চলে বলে তথ্য পাওয়ার বিষয়ে স্থানীয়ভাবে বসবাসরত বাংলাদেশের লোকজনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যেসব তথ্য মিশন সরবরাহ করছে তাও যাচাই-বাছাইতে সময় লেগে যায়। যেমন ভাইরাস–আক্রান্ত কেউ অনিয়মিত অভিবাসী হয়ে পড়লে তাঁর বৃত্তান্ত লোকজন জানাতে চান না। আবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেকেই দ্বৈত নাগরিক। কেউ আক্রান্ত হলে স্থানীয়ভাবে তাঁদের ওই দেশের নাগরিক হিসেবেই দেখানো হয়। তাই সব মিলিয়ে করোনাভাইরাসে ঠিক কতজন আক্রান্ত হয়েছেন, সেটা এখনো নিশ্চিতভাবে বলাটা দুরূহ।
তবে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা গতকাল এই প্রতিবেদককে জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৫ বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন ইতালিতে রয়েছেন। স্পেনে ২০ জন। ওই কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোকজনের বিষয়টি মিশনগুলো জেনেছে। তবে আক্রান্ত রোগীদের ব্যাপারে দূতাবাসের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের অসমর্থিত সূত্রের তথ্য অনুযায়ী সেখানে অন্তত ২০ জন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এখন পর্যন্ত সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, স্পেন, ইতালি ও ব্রুনেইতে বাংলাদেশের নাগরিকদের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। দেশের বাইরে সিঙ্গাপুরে প্রথম বাংলাদেশের নাগরিকেরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। তাঁদের মধ্যে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তিটি এখনো নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রয়েছেন। সেখানে আক্রান্ত অন্য চার বাংলাদেশি সুস্থ হয়ে এরই মধ্যে কাজে যোগ দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালিতে আরও তিন বাংলাদেশির মৃত্যু
নিউইয়র্ক সময় গত বৃহস্পতিবার রাতে কুইন্স সিটি বরোর দুজন বাংলাদেশি মারা গেছেন। তাঁদের একজনের বয়স ষাটের কাছাকাছি। অ্যাস্টোরিয়ার ওই বাসিন্দার হৃদরোগ ছিল। করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর তিনি স্থানীয় কুইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া ৫০ বছর বয়েসী অন্য বাংলাদেশি উডসাইড এলাকায় থাকতেন।
গত শুক্রবার রাতে করোনাভাইরাসে ইতালির মিলান শহরের বিজুত্তেরিয়ায় ৫০ বছর বয়স বয়সী এক বাংলাদেশি প্রাণ হারান। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চিকিৎসার পর তিনি মারা যান। পরিবারের সবাইকে নিয়ে মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি মিলানে বসবাস করছিলেন।