কুয়েতে মানবপাচারের দায়ে আমির হোসেন ওরফে সিরাজউদ্দীনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মানবপাচারের দায়ে কুয়েতের আদালত দেশটির একজন নাগরিক ও তিন বাংলাদেশিকে কারাদণ্ড দেয়। আমির ওরফে সিরাজউদ্দীন তাঁদের একজন।
সিআইডি জানাচ্ছে, বিদেশি একটি গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁরা আমির হোসেন ওরফে সিরাজউদ্দীনকে গ্রেপ্তার করে। কুয়েতের কর্তৃপক্ষের চোখ এড়িয়ে তিনি ও তাঁর সহযোগীরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। আমির ওরফে সিরাজউদ্দীন গত দেড় বছর ধরেই নরসিংদীতে তাঁর বাড়িতে ছিলেন। সেখান থেকেই গত ১৭ আগস্ট তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানায়, চারজন ‘কুখ্যাত’ মানব পাচারকারী দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার করে আসছিল। এ চক্রের সদস্যদের হাতে নয় শরও বেশি ব্যক্তি পাচারের শিকার হন। তাঁরা একেকজনের কাছ থেকে জন প্রতি ছয় লাখ টাকা বা তার চেয়েও বেশি টাকা আদায় করেন। পাচারের শিকার ব্যক্তিদের মোটা বেতনের লোভ দেখিয়ে কুয়েতে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালাচ্ছিল পাচারকারীরা। প্রতারিত বাংলাদেশি নাগরিকেরা কুয়েতে কোনো কাজের সন্ধান পায়নি। সেখানে থাকা-খাওয়ার মারাত্মক সংকটে পড়ে উদ্বাস্তু অবস্থায় কুয়েতের রাস্তায়- রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হয় তাঁদের। কাউকে কাউকে আবার তারা বন্দীও করে রাখে। কুয়েতের কর্তৃপক্ষ জানায়, পাচারকারীরা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভিসা নেয় বলেও নিশ্চিত হয়েছে তারা।
এর মধ্যে পাচারের শিকার কয়েকজন কুয়েতের সরকারি এজেন্সি ও জনশক্তি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলে তারা বিষয়টি তদন্ত শুরু করে। তদন্তে চক্রটির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কুয়েতের আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের হয়। পরবর্তীতে এ চক্রের চার সদস্যের (১ জন কুয়েতের ও ৩ জন বাংলাদেশি) বিরুদ্ধে কুয়েতের আদালত অভিযোগ আমলে নেয়। আদালত তাদের তিন বাংলাদেশিকে তিন বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়। এ চক্রের অন্যতম সদস্য জনৈক কুয়েতের নাগরিক ছয় বছরের সাজা পেয়ে কারাগারে আছেন। তবে বাংলাদেশিরা যে কোনো উপায়ে দেশে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়।
সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাজীব ফারহান প্রথম আলোকে বলেন, ত্রিশ বছর আগে গলাকাটা পাসপোর্টে আমির হোসেন নামে কুয়েতে যান। আদতে তাঁর নাম সিরাজউদ্দীন। কুয়েতের আদালত কারাদণ্ড দিলে কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেড় বছর আগে বাংলাদেশে চলে আসেন। নরসিংদীর বাড়িতে দিব্যি ছিলেন। এলাকায় তাঁর বেশ প্রভাব প্রতিপত্তিও আছে। তিনি যে মানবপাচারের দায়ে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সেটা এলাকার লোক বিশ্বাস করে না। তাঁকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে সিআইডিকে এলাকার লোকজনের বাধার মুখেও পড়তে হয়।