‘ফেসবুক আর আমাদের দেশ থেকে টাকা নিতে পারবে না। দেশের টাকা দেশেই থাকবে। আমাদের সিকিউরিটি আমাদের হাতেই থাকবে। ফেসবুকের সঙ্গে সরকারের কোনো বৈঠকও করা লাগবে না। এটা শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নয়, ই-কমার্স সাইটও।’ কথাগুলো বলছিল সিটি ব্যাংক-প্রথম আলো বিজ্ঞান উৎসবে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী মোরশেদ সিকদার।
আজ রোববার থেকে দুই দিনব্যাপী সিটি ব্যাংক-প্রথম আলো বিজ্ঞান জয়োৎসব শুরু হয়েছে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট কনভেনশন সেন্টারে। এই উৎসবের উদ্বোধন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।
ফরিদপুর জেলা থেকে ঢাকার জাতীয় পর্বের উৎসবে অংশ নিচ্ছে মোরশেদ সিকদার। তার সাইটের নাম (www.everythinghere.pw)। ই-কমার্সের জন্য সাইটটির সাব-ডোমেইনও রয়েছে। সে জানায়, ‘সরকার সহায়তা করলে—এটা হতে পারে বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম, বিকল্প ফেসবুক। নিজের দেশের সাইট থাকতে আমরা অন্য দেশের ওপর কেন নির্ভরশীল হব।’
মোরশেদ সিকদারের মতো বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৫টি আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ীরা সিটি ব্যাংক-প্রথম আলো বিজ্ঞান জয়োৎসবে ১১৫টি প্রকল্প নিয়ে অংশ নিয়েছে। ‘পটেটো পাওয়ার’, ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আধুনিকায়ন’, ‘আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে মশা মারার আধুনিক যন্ত্র’, ‘লেমন পাওয়ার’ নামের নানান প্রকল্প নিয়ে অংশ নিয়েছেন খুদে বিজ্ঞানীরা।
বগুড়ার মিলেনিয়াম স্কলাস্টিকা স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী মানহা বিনতে রহমান বিজ্ঞান উৎসবে অংশ নিয়েছে ‘পটেটো পাওয়ার’ প্রকল্প নিয়ে। কীভাবে এই প্রকল্প বানাতে হয়? সে বলল, আলু, তামার পাত ও তামার তার দিয়ে সে প্রকল্পটি বানিয়েছে। শুধু আলু দিয়ে নয়, কমলা কিংবা কলা দিয়েও এই ‘পাওয়ার’ বানানো যায়। ক্যালকুলেটর ও রিমোটের মতো ছোট ছোট যন্ত্রাংশ এই শক্তির সাহায্যে চালানো যাবে বলেও জানায় সে। ছোট্ট এই শিশুর মেলায় বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহে দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে।
সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের আধুনিকায়ন ও উন্নত পদ্ধতি নিয়ে উৎসবে অংশ নিয়েছেন রাইসা মায়মুনা রহমান, মাহনুন হায়দার ও এস এম রাহাত আমীন। এঁরা সবাই খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁদের প্রকল্প সম্পর্কে জানান রাইসা মায়মুনা রহমান। তিনি বলেন, আমাদের প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্পের আধুনিকায়ন। একই জায়গায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনার (আইপিএম) মাধ্যমে আধুনিক কৃষিচাষ পদ্ধতি রয়েছে। এখানে ব্যবহার করা হয়নি কোনো রাসায়নিক দ্রব্য। এ প্রকল্পে কেঁচোর মাধ্যমে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করা হবে, যা জমির জন্য খুবই উপকারী। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অল্প জমিতে অধিক চাষাবাদ।’
বিজ্ঞান উৎসবে ‘ড্রোন’ নিয়ে এসেছে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মানিয়া আহমেদ, ফাহিম ফয়সাল ও শাহরিয়ার ফাহিম। এদের মধ্যে মানিয়া আহমেদ ‘ড্রোন’ সম্পর্কে বলে, ‘আমাদের ড্রোনটি
দুই কিলোমিটার দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে আমাদের দেশে ড্রোন বানানোর চর্চা একেবারেই নেই। যদিও কিছুটা হয়, সেটা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে। অথচ উন্নত দেশগুলোতে ড্রোন তৈরির চর্চা স্কুল থেকেই হয়। এটা করা গেলে আমাদের দেশের প্রযুক্তিতে ব্যাপক উন্নয়ন হবে।’ সে জানায়, বাংলাদেশে ড্রোন উড্ডয়ন করতে গেলে বিমানবাহিনীর অনুমতির প্রয়োজন হয়।
কুমিল্লা থেকে বিজ্ঞান উৎসবে যোগ দিয়েছে দুই সহোদর আহম্মেদুর রাজি ও আহসানুর রাজি। আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে মশা মারার আধুনিক যন্ত্র নিয়ে এসেছে তারা। আহম্মেদুর রাজি জানায়, ‘বাসা-বাড়ির মশা মারতে আমরা অ্যারোসল ব্যবহার করি। অনেক সময় এটাতে রাসায়নিক বিষক্রিয়া হয়। কিন্তু মশা মারার এই আলোর ফাঁদটি ব্যবহার করলে কোনো কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই খুব সহজেই মশা মারা সম্ভব।’
বিজ্ঞান উৎসবে ‘লেমন পাওয়ার’ নামের একটি প্রকল্পেরও দেখা মেলে। প্রকল্পের মাধ্যমে দেখানো হচ্ছে লেবু দিয়ে কীভাবে ব্যাটারি বানানো যায়।
এর আগে সকালে বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। এরপর মেলার বিভিন্ন প্রকল্প ঘুরে দেখেন মন্ত্রী ও আমন্ত্রিত অতিথিরা। তাঁরা কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাজিয়ে রাখা প্রকল্পগুলোর ব্যবহার ও উপযোগিতা নিয়ে কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিটি ব্যাংকের প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান মো. জহিরুল ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (ব্র্যান্ড) আলমগীর হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিজ্ঞান জয়োৎসবের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারপারসন অধ্যাপক জেবা ইসলাম সেরাজ, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, বিজ্ঞান জয়োৎসবের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী মুনির হাসান প্রমুখ।
বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৫টি আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ীরা ১১৫টি প্রকল্প নিয়ে উৎসবে অংশ নিয়েছে। এসব প্রকল্প থেকেই কে বিজয়ী হবে তা নির্ধারণ করা হবে। মেলায় অংশ নেওয়া তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হবে বিজ্ঞানবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা। এরপর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানও হবে কাল।
সিটি ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রথম আলো এই উৎসবের আয়োজন করেছে।
আরও পড়ুন: