ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম (এস এম) হলে ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হকসহ কয়েকজনের ওপর হামলার ঘটনায় তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। আজ বুধবার সকালে নুরুল হকের নেতৃত্বে ভুক্তভোগীরা উপাচার্যের কাছে বিচারের দাবি নিয়ে গেলে তিনি এ আশ্বাস দেন।
তবে এস এম হলের ওই ঘটনায় আগামী সোমবারের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন নুরুল হক। উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি সোমবার পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন।
বিচার চাইতে উপাচার্যের কাছে গিয়েছিলেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, শামসুন নাহার হলের ভিপি শেখ তাসনীম আফরোজ, স্বতন্ত্র জোট থেকে ডাকসুর ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান, জিএস প্রার্থী শাফী আবদুল্লাহ, আন্তর্জাতিক–বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী তালিম হাসান রিজভী এবং সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জিএস প্রার্থী রাশেদ খান ও এজিএস প্রার্থী ফারুক হোসেন। উপাচার্য কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, সহকারী প্রক্টর সীমা ইসলাম প্রমুখ। উপাচার্য তাঁদের বলেন, ‘এস এম হলের মঙ্গলবারের ঘটনায় হলের প্রাধ্যক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যায় করে কেউ যাতে পার না পায়, সে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করব।’
সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর ডাকসু হওয়াতে অনেকে নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে জানেন না। হল সংসদের নেতারাও বোঝেন না তাঁদের করণীয় কী। তাই ভাবছি একটি ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের আয়োজন করব। ডাকসুর সাবেক নেতাদের এনে প্রোগ্রাম করব। আর যেকোনো অন্যায়-অপরাধ ক্যাম্পাসে ঘটলে আমাদের একটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করে তারপর সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হয়। এস এম হলের ঘটনার ক্ষেত্রেও তাই হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী ফরিদ হাসানকে এস এম হল শাখা ছাত্রলীগ ও হল সংসদ নেতাদের নেতৃত্বে গত সোমবার রাতে মারধর করা হয়। হল সংসদের নেতারা ফরিদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও সেবনের অভিযোগ তোলেন। ওই ঘটনার বিচার চেয়ে গতকাল বিকেলে হলের প্রাধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন ভিপি নুরুল হকসহ অভিযোগকারীরা। তাঁরা হলটির ভেতরে গেলে সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। এরপর সন্ধ্যায় হলটি থেকে বের হতে গেলে নুরুল হক, আখতার হোসেন, শামসুন নাহার হলের ভিপি শেখ তাসনীম আফরোজ, ছাত্র ফেডারেশন থেকে ডাকসুর জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উম্মে হাবিবা, স্বতন্ত্র জোট থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অরণি সেমন্তি খানসহ বেশ কয়েকজনকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এই ঘটনার বিচার চেয়ে গতকাল রাত পৌনে আটটা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীরাও। আন্দোলনকারীদের পাশেই অবস্থান নেন এস এম হল সংসদ ও হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। আজ সকাল নয়টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থানের পর আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর কার্যালয়ে যান।