বৈশাখে ইলিশ

বিক্রি কমেছে, দাম কমেনি

ইলিশের আমদানি বেশি হলেও ক্রেতা কম। বুধবার রংপুরের সৈয়দপুর বাজারে
প্রথম আলো

করোনার কারণে গত দুই বছর অনেকটা ঘরবন্দী অবস্থাতেই বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন করতে হয়েছে। যে কারণে পয়লা বৈশাখ ঘিরে ইলিশ নিয়ে মাতামাতি ছিল না। অবশ্য এরও কয়েক বছর আগে থেকেই বর্ষবরণ উদ্‌যাপনে বাঙালির খাবারের তালিকায় ইলিশের কদর একটু একটু করে কমছিল। এরপরও বৈশাখ এলেই চাহিদা বাড়ে ইলিশের। সুযোগ বুঝে দামও বাড়িয়ে দেন বিক্রেতারা। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি।

ইলিশ ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে এই মাছের সরবরাহ মোটামুটি, তবে বিক্রি একেবারেই কম। দেশে ইলিশের অন্যতম পাইকারি বাজার চাঁদপুর। সেখানেও এবার বাজার মন্দা। বৈশাখ ঘিরে হিমায়িত করে রাখা ১২৭ টন ইলিশ অবিক্রীত রয়ে গেছে।

অবশ্য বিক্রি কম হলেও দাম কমেনি। গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট বাজার, টাউন হল বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকারভেদে ইলিশের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। গতকাল ওই তিন বাজারে এক কেজি বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি ওজনের ইলিশ কেজি ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। অন্যদিকে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছিল কেজি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়।

মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট বাজারের মাছ বিক্রেতা মো. ইউনুস মিয়া গতকাল সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত মাত্র চার কেজি ইলিশ বিক্রি করতে পেরেছেন। তিনি বলেন, পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে এক মণ ইলিশ এনেছিলেন। কিন্তু বাজার একেবারে মন্দা।

কৃষি মার্কেট বাজারের অন্য ইলিশ বিক্রেতাদেরও একই দশা। হাঁকডাক দিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছিলেন না তাঁরা। কোনো কোনো ক্রেতা দাম জিজ্ঞাসা করেই চলে যাচ্ছিলেন।

কারওয়ান বাজারের ইলিশ বিক্রেতা জিয়াউল হক গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে ১০ কেজি ইলিশও তিনি বিক্রি করতে পারেননি। এবার রোজার মধ্যে পয়লা বৈশাখ হওয়ায় বিক্রি স্বাভাবিকের চেয়েও কম হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। চাহিদা কম হওয়ার পরও দাম বেড়েছে কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন যে ইলিশ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো আগের সংরক্ষণ করা। তাই দাম বেশি।’

দেশে ইলিশের ছয়টি অভয়াশ্রমের মধ্যে পাঁচটিতে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে এখন। গত ১ মার্চ শুরু হওয়া এই নিষেধাজ্ঞা ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় বরিশাল, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা ও শরীয়তপুর জেলার ইলিশ অভয়াশ্রম–সংশ্লিষ্ট নদ-নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে।

পড়ে আছে ১২৭ টন ইলিশ

পয়লা বৈশাখ ঘিরে চাঁদপুরের খন্দকার ফিশ প্রসেসিং অ্যান্ড আইস প্ল্যান্ট কমপ্লেক্স হিমাগারে ১৩০ টন ইলিশ সংরক্ষণ করা হয়েছিল। গতকাল এই হিমাগার থেকে মাত্র ৩ টন ইলিশ বিক্রি হয়েছে। বাকি ইলিশ হিমাগারেই রয়েছে।

হিমাগারটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মালেক খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, পয়লা বৈশাখে বিক্রি ভালো হবে, এই আশায় ভরা মৌসুমে এসব ইলিশ সংরক্ষণ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন ক্রেতাই পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের যেকোনো অঞ্চল থেকে মুঠোফোনে অর্ডার পাওয়ামাত্রই ইলিশ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এই হিমাগারে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ১০০ টাকা, ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭০০ টাকা, ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬২৫ টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬০০ টাকা ও ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছিল।