বিকল হওয়ার শঙ্কায় ৭৪ কোটি টাকার যন্ত্র

আড়াই বছর আগে যন্ত্রগুলো আমদানি করা হয়েছে। যেসব ভবনে এগুলো স্থাপন করা হবে, সেগুলো এখনো নির্মাণাধীন।

পশু জবাইখানার জন্য চীন থেকে আড়াই বছর আগে আমদানি করা হয়েছিল প্রায় ৭৪ কোটি টাকার যন্ত্র। কিন্তু সেগুলো কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। কারণ, যেসব ভবনে এগুলো স্থাপন করা হবে, সেগুলো এখনো নির্মাণাধীন। এভাবে পড়ে থাকায় এসব যন্ত্র বিকল হওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রকৌশলীরা।

দুটি পশু জবাইখানার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আমদানি করেছিল এসব যন্ত্র। সংস্থার প্রকৌশল বিভাগ সূত্র বলছে, হাজারীবাগ আধুনিক পশু জবাইখানার জন্য প্রায় ৪০ কোটি এবং কাপ্তানবাজার আধুনিক পশু জবাইখানার জন্য ৩৩ কোটি ২৮ লাখ টাকার যন্ত্র কেনা হয়েছে। দুটি জবাইখানার জন্য নেওয়া প্রকল্পে মোট ব্যয় ১৩৩ কোটি টাকা।

দায়িত্ব ছাড়ার আগে গত বছরের ২৪ মার্চ হাজারীবাগের জবাইখানাটিতে একটি গরু জবাই করে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করে গেছেন তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তখন এই প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান। বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব নেওয়ার পরদিনই তাঁকে চাকরিচ্যুত করেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. মাকসুদ হেলালি বলেন, যেকোনো যন্ত্র দীর্ঘদিন ফেলে রাখলে তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যন্ত্রগুলো যদি ইলেকট্রিক হয় তাহলে ঝুঁকি বেশি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি। এই আর্দ্রতার কারণে ইলেকট্রিক যন্ত্রগুলো সহজেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ সিটির যান্ত্রিক বিভাগের একজন প্রকৌশলী বলেন, যন্ত্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে—এমন শঙ্কার কথা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে। ভবনের নির্মাণকাজ অন্তত ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ শেষ হওয়ার পর যন্ত্রগুলো আমদানি করা উচিত ছিল। একই সঙ্গে অবকাঠামো নির্মাণকাজের দরপত্র ও যন্ত্রগুলো কেনার দরপত্র আহ্বানের কারণে আগে যন্ত্র আমদানি করতে হয়েছে।

২০১৭ সালের আগস্টে আধুনিক পশু জবাইখানা তৈরির উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জুনে। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এসব যন্ত্র আমদানি করা হয়।

ভবন নির্মাণের আগেই কেন যন্ত্রগুলো কেনা হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী রেজাউর রহমান বলেন, আগে যাঁরা দরপত্র আহ্বান করেছেন, তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন। তিনি বলেন, হাজারীবাগে যে যন্ত্র বসানো হয়েছে, তা এখন পর্যন্ত সচল আছে।

প্রকৌশলীদের ভাষ্য, হাজারীবাগে বসানো যন্ত্রটি পুরোপুরিভাবে চালু করতে হলে জেনারেটর বসাতে হবে। কিন্তু জেনারেটরটি এখনো ইতালি থেকে আনা হয়নি। করোনার কারণে আমদানিতে বিলম্ব হচ্ছে। এ ছাড়া ওই জবাইখানার সোলার প্যানেলও বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে। এগুলো প্রতিস্থাপনের পর চীনা প্রতিনিধিদল যন্ত্র পরিচালনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে। এরপর পুরোদমে শুরু হতে পারে এই জবাইখানা।

আগামী আগস্ট নাগাদ হাজারীবাগ আধুনিক পশু জবাইখানা এবং সেপ্টেম্বর নাগাদ কাপ্তানবাজার জবাইখানার পুরো কাজ শেষ করার লক্ষ্যে তাঁরা কাজ করছেন।
মুন্‌সি মো. আবুল হাসেম, পরিচালক, ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, হাজারীবাগ আধুনিক পশু জবাইখানা চালু হলে সেখানে ঘণ্টায় ৩০টি গরু এবং ৬০টি ছাগল জবাই করা যাবে। প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা জবাইখানা চালু থাকবে। আর কাপ্তান বাজার আধুনিক পশু জবাইখানায় ঘণ্টায় ১৪টি গরু এবং ৩০টি ছাগল জবাই করা যাবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, হাজারীবাগের গজমহল এলাকায় নির্মাণাধীন পাঁচতলা ভবনটির কাজ প্রায় শেষ। এখন সেখানে শেষ মুহূর্তের ঘষামাঝার কাজ চলছে। আর সেখানে স্থাপন করা যন্ত্রগুলো প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে কাপ্তানবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইতিমধ্যে সেখানে মূল অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা এবং শেষ পর্যায়ের কাজ এখনো বাকি। প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, ভবনের কাজ পুরোপুরি শেষ হতে আরও তিন থেকে চার মাস লাগবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মুন্‌সি মো. আবুল হাসেম বলেন, আগামী আগস্ট নাগাদ হাজারীবাগ আধুনিক পশু জবাইখানা এবং সেপ্টেম্বর নাগাদ কাপ্তানবাজার জবাইখানার পুরো কাজ শেষ করার লক্ষ্যে তাঁরা কাজ করছেন।